যশোর যানজটমুক্ত করতে নিবন্ধনবিহীন ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান

আগের সংবাদ

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

দৌলতপুরে নানা নাটকীয়তার পর শেষমেশ লটারিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত রানা বিশ্বাস

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৪ , ১১:৩৪ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৪ , ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আব্দুল মান্নান বিশ্বাস রানা ও ফারুক আলম পান্না সমানসংখ্যক (৬ হাজার ১২৩) ভোট পাওয়ায় শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার পর শেষমেশ ফল নির্ধারণে লটারির আয়োজন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক অায়োজিত এই লটারিতে আব্দুল মান্নান বিশ্বাস রানা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে সন্ধ্যার পর ইউনিয়নটিতে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু রাত ১০টার দিকে কমিশনের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা আসে পুনঃনির্বাচন নয়, লটারির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার। তখন থেকে শুরু হয় লটারির তোড়জোড়। প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। তারা লটারির সময় উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে উপজেলার সচেতন সমাজে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

শনিবার (৯ মার্চ) উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট পাঁচজন প্রার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্যে মূলত দুজনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হয়। ৯টি কেন্দ্রে সকাল ৮ থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি অবস্থানের কারণে নির্বাচনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

ওইদিন সন্ধ্যায় বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বিশ্বাস রানা ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ১২৩ ভোট। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আলম পান্না মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন তার সমানসংখ্যক ভোট (৬ হাজার ১২৩)। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া চশমা প্রতীকে মেহেদী হাসান ৬৩৬ ভোট এবং আব্দুল হালিম টেবিল ফ্যান প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ ভোট। ওই ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৮৪৬ জন। মোট ভোট পোল হয়েছে ১৭ হাজার ৯২৬টি।

নির্বাচনী নিয়ম অনুসারে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা সমান সমান হলে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নিষ্পত্তি করার বিধান রাখা হলেও সমঅবস্থানে থাকা দুই প্রার্থীই লটারিতে যেতে সম্মত হননি। এ কারণে পুনরায় ইউনিয়নটিতে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল। আর এই হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণেই দেখা দেয় নানামুখী বিড়ম্বনা।

পরে রাত ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশন থেকে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান নেই জানিয়ে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয়। এর পরপরই সমানসংখ্যক ভোট পাওয়া দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্টদের উপজেলা নির্বাচন অফিসে জরুরিভিত্তিতে তলব করা হয়। শুরু হয় লটারি আয়োজনের তোড়জোড়। ভোট পুনর্গণনার দাবি জানানো মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম পান্না নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হলেও প্রশাসনের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাওয়া আব্দুল মান্নান বিশ্বাস রানা বেঁকে বসেন। তার পক্ষে নির্বাচনের চিফ এজেন্ট মো. আলাউদ্দিন রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লটারি সিস্টেম বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান।

দফায় দফায় নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলেও রানা উপস্থিত হননি। রানা বিশ্বাস উপস্থিত না হওয়ায় ফারুক আলম পান্নাও ফের ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়ে রাত সোয়া ১টার দিকে নির্বাচন অফিস ত্যাগ করেন। এতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরেক বিড়ম্বনায় পড়েন। পরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর অনুপস্থিতিতেই লটারির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। নানা নাটকীয়তার পর রাত দেড়টার দিকে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারির মাধ্যমে ঘোড়া প্রতীকের আব্দুল মান্নান বিশ্বাস রানা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

শেষ মুহূর্তে এসে লটারি বয়কট করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকা রানা বিশ্বাসকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করার পরপরই তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গভীর রাতেই (রাত ২টার পর) মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে উপজেলা সদরে এসে আনন্দ উচ্ছ্বাস করেন। অন্যদিকে ফারুক অালম পান্না রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারির ঘটনাকে অবৈধ দাবি করে এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনে দুই প্রার্থীর ভোট সমানসংখ্যক হওয়ায় লটারির মাধ্যমে তাদের ফলাফল নিষ্পত্তির কথা জানানো হলে তারা এতে সম্মত হননি। ফলে ইউনিয়নটিতে তাদের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা তাৎক্ষণিক জানানো হলেও পরে কমিশনের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা মোতাবেক লটারির আয়োজন করা হয়। দুই প্রার্থী লটারির সময় উপস্থিত না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেই লটারি করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ, দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উপজেলার সচেতন মহল বলছে, নির্বাচনে দুজন প্রার্থী একই সমান ভোট পেলে এক্ষেত্রে কী করণীয় তা কমিশনের নির্বাচনী বিধিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেই মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়ে সমান ভোটের অধিকারী দুই প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন কীভাবে। লটারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি সন্ধ্যায়ই জানানো হলে এ নিয়ে এত বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতো না। যে লটারি রাত দেড়টায় করা হলো সেটি তো তাৎক্ষণিকই করা যেত। প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থীর উপস্থিতি ছাড়া লটারি প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ। এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও সুস্পষ্ট গাফিলতির বহির্প্রকাশ বলে মনে করছে সচেতন মহল।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ বাবলু গত বছরের ১৪ অক্টোবর হৃদযন্ত্রে ক্রিয়াবন্ধ হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুতে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হওয়ায় শনিবার এখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়