যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ এসআই বেনাপোল পোর্ট থানার আমির হোসেন

আগের সংবাদ

মণিরামপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

পরের সংবাদ

সুখসাগর বীজ উৎপাদন করে সুখ বয়ে আনলেন মেহেরপুরের চাষিরা

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৪ , ৯:৫৬ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৪ , ৯:৫৬ অপরাহ্ণ

মেহেরপুরে সুখ সাগর জাতের পেয়াঁজের বীজ উৎপাদন করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন জেলার কৃষকরা। নিজেদের উৎপাদন করা বীজেই পেয়াঁজ চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে চাষরা। বিগত কয়েক বছর সুখ সাগর জাতের ভারতীয় ভেজাল বীজে প্রতারিত হয়ে লোকসানে পড়েছিল জেলার কৃষকরা। তারপরই বীজ উৎপাদনে ঝুকে পড়ে চাষিরা। কয়েক বছর ধরে পরীক্ষামূলক চাষের পর সফলতা পাওয়ায় ও অধিক লাভে বিক্রি করতে পারাই বীজ উৎপাদনে ঝুকছে জেলার চাষিরা। নিজের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি জেলা ও জেলার বাইরে বীজ বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে চাষিরা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে সুখ সাগর জাতের পেয়াঁজের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি বীজ উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। এছাড়াও বীজ উৎপাদনের পর বিঘা প্রদি ৪৫-৫০ মন পেয়াঁজও পাওয়া যায়। ফলে সময় বেশি লাগলেও বীজ উৎপাদন বাড়ছে জেলা জুড়ে।

চাষিরা বলছে, পেঁয়াজ বীজ বপনের সময় ভারত থেকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো । বীজ সংকটের কারণে অনেকেই চড়া দামে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ বীজ কিনতেন। বর্তমানে আমদানি নির্ভর না থেকে কৃষকরা নিজ ক্ষেতেই পেঁয়াজের বীজ উৎপন করছেন। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর সরবরাহ করছেন অন্যান্য চাষিদের কাছে ও জেলার বাহিরেও। এতে উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমে অধিক মুনাফা হচ্ছে।

কৃষিবিভাগ বলছে, কৃষকরা আমদানি নির্ভর না থেকেই নিজেদের উৎপাদিত বীজ দিয়ে যে সুখসাগর পেঁয়াজসহ বিভিন্ন চাষ শুরু করেছেন তা একটি ইতিবাচক দিক। বীজ উৎপাদনে চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। এবছরে মেহেরপুরে ২ শতাধিক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হচ্ছে।

পেয়াঁজ চাষি খাইরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের প্রচলিত জাত তাহেরপুরি, বারি-৪, নাসিকা রেড ও ফিপটি-৫০ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হতো। পরে ভারত থেকে সুখসাগর পেঁয়াজ বীজ পাওয়ায় ও অধিক ফলন হওয়ায় এ জাতের পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকে পড়েন চাষিরা। এতদিন বপনকালীন সময়ে বীজ সংকট দেখা দিলে বেশি মূল্য দিয়ে বীজ কেনা এবং ভেজাল বীজে ফলন বিপর্যয়ে চাষিদের লোকসান গুণতে হতো। তাই এখন নিজেরাই বীজ উৎপাদন করে পেয়াঁজের আবাদ করা হচ্ছে। এজন্য প্রতারিত হওয়ার ঝুকি কম ও উৎপাদন খরচও অনেক কম হচ্ছে।

আরেক চাষি জহিরুল আলম বলেন, প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে চলতি মৌসুমে ৫ হাজার টাকাও ছাড়াতে পারে দাম। এছাড়াও শুধু বীজ নয়, ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করার পর গাছ থেকে পেঁয়াজ পাওয়া যায় বিঘা প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ মণ। একই সঙ্গে বীজ ও পেঁয়াজ দুটোই পাচ্ছে চাষিরা।

বভরপাড়া গ্রামের পেয়াঁজের বীজ চাষী জিল্লুর রহমান বলেন, নভেম্বরের শুরু দিকে বীজ উৎপাদনের জন্য পেয়াজের গুটি বপন করা হয়। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ফলন পাওয়া যায়। একই জমি থেকে বীজ ও পেঁয়াজ দুটোই পাচ্ছি। সময় বেশি লাগলেও বিঘা প্রতি জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হয়। আমাদের মুজিবনগর উপজেলায় শতভাগ চাষি সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেন। ভারত থেকে আমদানি নির্ভর না থেকে এখন নিজেরাই বীজ উৎপাদন করছেন। আমি গত ৬-৭ বছর ধরে বীজ উৎপাদন করি। এতে বীজ কেনার টাকা ও লাগছে না আবার ভেজাল বীজ নিয়ে প্রতারিত হতে হচ্ছে না।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমি খাতুন জানান, জেলায় বীজ উৎপাদন বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুন পরিমান জমিতে বীজ উৎপাদন হচ্ছে। আমদানি নির্ভর কমাতে আমাদের এই উদ্যোগ নেয় হয়েছে। চাষিরাও বেশ সাড়া দিচ্ছেন। উন্নত জাতের এই সুখসাগর বীজ অধিক উৎপাদন করে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মার্চ ০৭, ২০২৪, at ২১:৫০ (GMT+06) রূপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়