বিচারহীনতায় যাচ্ছে বছরের পর বছর
আজ ৬ মার্চ নৃশংসতম উদীচী হত্যাকাণ্ড দিবস। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের, বিচারহীনতায় চলে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এমনকি বাস্তবে কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদঘাটন হয়নি আজও। ঘাতকদের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতদের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তবে সরকারি কৌশুলীর প্রত্যাশা, শিগগিরই উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।
১৯৯৯ সালের ৪, ৫ ও ৬ মার্চ। ঐতিহাসিক যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন। প্রথমদিনের অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্নের পর ৬ তারিখ ছিলো সমাপনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে বাউল গানের আসরে হঠাৎ দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শক প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ। নিহত হন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বুলু, রতন রায়, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম ও রামকৃষ্ণ।
প্রতিবছর এই দিনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্জ্বালন আর বিচারের একই দাবি করে আসছেন স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে।
এতবড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের স্বজনেরা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে আহতদের কয়েকজন জানান দুঃসহ দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই। একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানেও আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাডেজির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’
দীর্ঘ সময়েও বিচার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ উদীচী যশোরের নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, ‘দুই যুগ পার হলেও উদীচী যশোর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। যে কারণে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা চাই, সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করুক। ’
এদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এ মামলাটি পুনরায় চালু করতে উচ্চ আদালতের একটি আপিলনিষ্পত্তির প্রয়োজন। এ জন্য আমি অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু আজও কোনো শুনানি হয়নি।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।