কেশবপুরে জলাবদ্ধ এলাকায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট
সীতা সরকার নামে এক গৃহিনী ৫টি গরু লালন পালন করে। কিন্তু গোখাদ্যের যে দাম এতে যারা গরু লালন পালন করছেন তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। গরুর খাদ্যের জন্য তিনি কচুরিপনা সংগ্রহ করছিলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে গতবছর বিলে বোরো আবাদ হয়নি। ইতিমধ্যে বিচালিও ফুরিয়ে গেছে। বাড়িতে ৫টি গরুকে খাওয়ানোর জন্য বাধ্য হয়েই ঠান্ডা পানির মধ্য থেকে কচুরিপনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে জানান পাঁজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা সীতা সরকার নামের এই গৃহিনী।
যশোরের কেশবপুরের জলাবদ্ধ এলাকায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জলাবদ্ধ এলাকার খামারি ও কৃষকেরা। জলাবদ্ধতার কারণে বোরো আবাদ না হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। গোখাদ্যের যে দাম এতে খাদ্য খাওয়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছে বেশী খামারীরা। প্রতি কাউন বিচালি সাত হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার পাঁচশত টাকা করে বাজারে বিক্রী হচ্ছে।
তবে উপজেলার পাঁজিয়া, গৌরীঘোনা, সুফলকাঠি ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার কৃষকরা বিচালির অভাবে গবাদি পশু পালনে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। গরু পালনে বাড়তি টাকা ব্যয়ে খামারীরা বিচালি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি অনেকেই
বিলের পানি থেকে কচুরিপনা সংগ্রহ করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার দুই হাজার ২৫৩ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সুফলকাটি ইউনিয়নে এক হাজার ২৭৪ হেক্টর, পাঁজিয়া ইউনিয়নে ৬৫০ হেক্টর, গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ৫১ হেক্টর, মঙ্গলকোট ইউনিয়নে ১৮১ হেক্টর, কেশবপুর সদর ইউনিয়নে ৯৪ হেক্টর, পৌরসভায় ৩ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। এ সমস্ত জমিতে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।
সরেজমিন উপজেলার ৭ নম্বর পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ডিঙ্গি নৌকায় করে জলাবদ্ধ বিলের পানি থেকে মনোহরনগর গ্রামের গৃহবধূ মান্দারী রায় বলেন, ‘বাড়িতে ৩টি গরু রয়েছে। বিচালি কেনার মতো অবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিলের মধ্য থেকে কচুরিপনা কেটে বস্তায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। ৬ নম্বর সদর ইউনিয়নের দোরমুটিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন আমার দুইটি গরু আছে।গোখাদ্যের অভাবে গরুর স্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখা হয়েছে দায়। গড়ভাঙ্গা গ্রামের হায়দার আলী বলেন গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দুঃচিন্তায় পড়েছি। সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর আব্দুল গফফার গাজী বলেন, ‘বিল খুকশিয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে বোরো আবাদ হয়নি। এলাকায় বিচালীর সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি কাউন বিচালি সাত হাজার টাকা করে কিনে গরু পালন করতে হচ্ছে।
যশোরের হাশিমপুর থেকে বিচলী বিক্রি করতে আসা রায়হান হোসেন বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধ এলাকায় প্রতিদিনই যশোর থেকে বিচালি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। এসব এলাকায় বিচালীর চাহিদাও বেশি রয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিদের বলেন, ‘জলাবদ্ধ এলাকায় গরুকে খাওয়ানোর জন্য বিচালীর কিছুটা সংকট রয়েছে। তবে গবাদী পশু পালনকারীরা বাইরে থেকে বিচালী সংগ্রহ করে সংকট মোকাবেলা করে থাকেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।