রমজানের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। চাল-ডাল, মাছ-মাংসের সঙ্গে নতুন করে বেড়েছে মসলা পণ্যের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বস্তির খবর নেই কোনো বাজারেই। সাতক্ষীরায় হঠাৎ বেড়েছে মসলার দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি মসলাতে দাম বেড়েছে ৭০-৬০০ টাকা। কেজিতে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে লবঙ্গর দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিনিময় হার বাড়ার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী আমদানি না হওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে।
সোমবার সাতক্ষীরা জেলা সদরের সুলতানপুর বড় বাজারের কয়েকটি মসলার দোকান ঘুরে এতথ্য জানা গেছে। সুলতানপুর বড় বাজারের খুচরা মসলা বিক্রির প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিনিয়া স্টোরে রবিবার মার্কিন ছোট এলাচ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় ছোট এলাচ দুই হাজার ৪০০ টাকা, লবঙ্গ প্রতিকেজি এক হাজার ৮০০ টাকা এবং দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি। যদিও দুই সপ্তাহ আগেও একই প্রতিষ্ঠানে মার্কিন ছোট এলাচ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ২০০ টাকা, ভারতীয় ছোট এলাচ দুই হাজার ২০০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ২০০ টাকা ও দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ফখরুল হোসেন জানান, পাইকারিতে দাম বাড়ার পাশাপাশি সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো জাতের এলাচ ও লবঙ্গ মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও পণ্যটি আমদানি হয়। তবে সম্প্রতি সবধরনের মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে।’ পাইকারি মসলার আড়ত মেসার্স আব্দুর রউফ স্টোরে শনিবার (২ মার্চ) ভালো জাতের ছোট এলাচ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকা দরে। পাশাপাশি লবঙ্গ এক হাজার ৭০০ ও দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৩৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আব্দুর রউফ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মসলার দাম বেড়েছে।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা কালিদাশ কর্মকার জানান, সম্প্রতি মসলাজাত পণ্য লবঙ্গ দাম লাগাহীন বেড়েছে। দেড় থেকে দুই মাস আগে যে লবঙ্গ ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, তা বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। শুধু লবঙ্গ নয়, সব ধরনের মসলার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে কয়েকজন ক্রেতা বলেন, মসলার দাম এতো বেশি বেড়েছে যে নিজের জমিদারি না থাকলে মসলা কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থাতে বিক্রেতাদের স্বার্থ না দেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থও দেখতে হবে। না হলে রোযার আনন্দ সাধারণ মানুষদের জন্য ভোগান্তিতে রুপান্তর হবে।
ভোমরা বন্দরের মসলাজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাফসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু হাসান বলেন, ‘এ বন্দরে কোনো মসলা আমদানির অনুমোদন নেই। দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়েই মূলত ভারত থেকে মসলা আমদানি হয়ে থাকে। ফলে সাতক্ষীরায় পণ্যটির দাম একটু চড়া থাকে। জিরার পাশাপাশি ভোমরা বন্দর দিয়ে মসলা আমদানি করতে পারলে সরকারের যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। এতে সাতক্ষীরায় মসলার দামও কমে আসবে।’
সাতক্ষীরা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেশের চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ মসলা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিনিময় হার বাড়ার কারণে এসব উচ্চমূল্যের মসলার দাম সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।