যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস
যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় দালালের মাধ্যমে ঘুষগ্রহনের অভিযোগ যেন লেগেই আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেক দিকে খুলে দেয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। পাসপোর্ট অধিদফতরের যশোরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যক্তি। অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে চ্যানেলের মাধ্যমে করছেন ঘুষের কারবার। পাসপোর্ট অফিসে কথিত ‘চ্যানেল মাস্টারে’র মাধ্যমে প্রতিদিন ঘুষ তোলার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, সরোজমিনে পাসপোর্ট অফিসে চোখে পড়ে শৃঙ্খলার আঁচড়। প্রধান ফটকে ঢুকলেই একজন এএসআইসহ দুই পুলিশ ও কয়েকজন আনছার সদস্য প্রতিজন পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচাই-বাছাই করে সিল স্বাক্ষর করে ভিতরে প্রবেশ করান
দ্বায়িত্বরত এএসআই হুমায়ুন বলেন, আমরা এখান থেকে গ্রাহকদের রিসিভ করে ভিতরে পাঠাই যাতে কোন দালাল গেটের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
নীলগঞ্জের বাসিন্দা বিপ্লব হোসেন জানান, দালালরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে বাইরে থেকে ফাইল কমপ্লিট করে দেন। যার ফলে তারা অফিস চত্বরে না আসলেও তাদের কাজ হয়ে যায়। পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারি খুবই ধীরগতি এ কারনে মানুষের ভোগান্তি চরমে।
যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান উপ পরিচালক মধূসূদন সরকার যোগদানের পর থেকে অফিস চত্বরে দালাল ও বহিরাগত লোকজন আসা বন্ধ ও মোটামুটি শৃঙ্খলা ফিরলেও তার অধস্তন কতিপয় কর্মকর্ত ও কর্মচারির কারনে একশ্রেণির মানুষ ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না।
সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকির দাবী করেন যশোরের সচেতন মহল। যশোরের শার্শা থেকে আসা হারুন অর রশিদ ও নওয়াপাড়া থেকে আগত জুলহাস আহমেদ জানান, একসময় পাসপোর্ট অফিসে আসলে দেখা যেত দালালরা অনেকটা খোলামেলাভাবেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তবে বর্তমানের চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে।
জানা গেছে, যশোর শহরের প্রায় ১০ থেকে ১২ টি স্পটে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি তাদের কৌশল পরিবর্তন করে রমরমা বাণিজ্য করছেন। সাধারন মানুষেরা সাব দালালের মাধ্যমে ওই স্পটগুলোতে পাসপোর্ট করতে যেয়ে পড়েন নানান ভোগান্তিতে।
সূত্রমতে, গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক চালান বাদেও ঝামেলামুক্ত পুলিশ রিপোর্ট বাবদ ২ হাজার ও অফিসে আবেদন ফরম জমা দেয়ার জন্য ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল চক্র। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের নামেও বাড়তি টাকা আদায় করছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। সাধারন মানুষ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, শহরের যেসকল স্পটে পাসপোর্টের অনৈতিক অবৈধ ডেরা গড়ে উঠেছে সেগুলো অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বন্ধ করা হোক।
জানতে চাইলে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক মধুসূদন সরকার রূপান্তর প্রতিনিধিকে জানান, পাসপোর্ট অফিস আগের তুলনায় বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আমি চাই সাধারন মানুষ তাদের কাঙ্খিত সেবাটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে যেন পেয়ে থাকেন।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, জনগনকে আরো সচেতন হতে হবে তারা যেন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে না যান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।