উপদলীয় কোন্দল, আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, মারামারি করে আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর অস্ত্রশস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। ফলে অশান্ত হয়ে উঠেছে অন্তত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর মধ্যে সবচেয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে চায়ের দোকানে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা টানা তিন দিন সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ ৭০-৮০ নেতাকর্মী।
চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার কনসার্ট ঘিরে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হন ১৫ নেতাকর্মী, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একই কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বিরোধে সৃষ্ট সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এসব নিয়ে তিনটি ক্যাম্পাসে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। তাদের এমন বেপরোয়া আচরণে বিব্রত আওয়ামী লীগ। এমনকি এখন ছাত্রলীগের নারী নেতাকর্মীর হাতেও সাধারণ ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তার বহিরাগত বন্ধু মামুনুর রশিদের সহযোগিতায় এক দম্পতিকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখে। পরে মোস্তাফিজুর ও মামুন মিলে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে পড়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগ মানেই আতঙ্ক-সংগঠনটির এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা বা লাগাম টানার কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। সরকার যখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে, তখন সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নিজেদের মধ্যে এমন আচরণ আমাদের বিস্মিত না করে পারে না।
আওয়ামী লীগ দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির যে কোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে এ দল ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ এখন আমরা দেখছি স্বার্থের মাপকাঠিতে সবকিছু বিচার করে দলটির নেতাকর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বোঝেন না, তা নিশ্চয়ই নয়। আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের অপকর্মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। এখনো সময় আছে ওদের লাগাম টেনে ধরার। ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক, তাকে ছাড় দেয়া যাবে না- এটা যে কথার কথা নয়, প্রমাণ দিতে হবে নিজেদের পদক্ষেপে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।