রামনগরে সড়ক উদ্বোধন করলেন ফরিদ চৌধুরী

আগের সংবাদ

নিবিড় পর্যবেক্ষণে মোস্তাফিজ

পরের সংবাদ

দৌলতপুরে অবহেলিত সরকারি কলেজটিতে অবশেষে নির্মাণ হচ্ছে শহীদ মিনার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১০:৩৭ অপরাহ্ণ আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪ , ১০:৩৭ অপরাহ্ণ

প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর ও সরকারি করণের ৬ বছর পর অবশেষে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজে নির্মাণ করা হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত শহীদ মিনার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সরকারি গার্লস কলেজে এতদিন শহীদ মিনার ছিল না। এ কারণে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছিলেন কলেজটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় বেজায় খুশি অবহেলিত কলেজটির সবাই।

জানা যায়, দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজওয়ানুল হক রেজুর প্রচেষ্টায় এ উপজেলায় না থাকা গার্লস কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই মোতাবেক রেজওয়ানুল হক রেজুসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির দেয়া অার্থিক অনুদানে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১ একর ৩০ শতক জমি কেনা হয়। নির্মাণ করা হয় ১২ কক্ষবিশিষ্ট দুটি টিনশেড বিল্ডিং। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার প্রথম এই গার্লস কলেজটির নাম দেয়া হয়, শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব গার্লস কলেজ। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রেজু। এরপরে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করায় কলেজটি পুরোপুরি অবহেলিত হয়ে পড়ে, বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। দৌলতপুর থানা বাজারের পার্শ্ববর্তী স্থানে বিএনপি সমর্থিতরা দৌলতপুর গার্লস কলেজ নামে আরেকটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

এদিকে শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সরকারি গার্লস কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল আজম বিকো ২০০৫ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদের মেজো ছেলে আরিফ আহমেদ বিশ্বাস কলেজ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে আফাজ উদ্দিন আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরেও এই কলেজের অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি।

কলেজ সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কলেজটির দিকে নজর দেন। সরকার ২০১৬ সালে একযোগে দেশের যে ১৫টি শিক্ষপ্রতিষ্ঠান সরকারি করণের ঘোষণা দেয়, এই কলেজটিও এর আওতায় আনার জন্য জোর তদবির ছিল সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর। পরে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কলেজটি সরকারি গেজেটভুক্ত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদাধিকার বলে কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। মাঝখানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও কলেজটি অবহেলিতই থেকে গেছে। এমনকি সাবেক দুই এমপি প্রয়াত আফাজ উদ্দিন আহমেদ ও সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ সংসদ সদস্য থাকাকালে একটি দিনের জন্যেও কলেজটি দেখতে যাননি। বরং সাবেক দুই এমপিই এই কলেজ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এবারের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, দলীয় প্রার্থী সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এমপিকে পরাজিত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই কলেজটির দিকে নজর দেন। রেজাউল চৌধুরী আগেরবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আপ্রাণ চেষ্টায় ফজিলাতুননেছা মুজিব গার্লস কলেজ সরকারি করণে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। কলেজের রাস্তা সংস্কারের জন্য ২০ টন গম বরাদ্দ দেন তিনি। এবার এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রথমেই কলেজে শহীদ মিনার ও প্রধান গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই সরকারি গার্লস কলেজে ১৩ লাখ টাকার ওপরে ব্যয় নির্ধারণ করে শহীদ মিনারটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর মার্চেই ৯ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কলেজের প্রধান গেট নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ২২ লাখ টাকার ওপরে ব্যয়ে এই কাজ দুটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে কলেজটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশির প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। কলেজটিতে বর্তমানে মোট ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী এবং শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন।

দৌলতপুর শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সরকারি গার্লস কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সাবেক এমপিপুত্র আরিফ আহমেদ বিশ্বাস প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করে আসছেন। তিনি ১৯ বছর আগে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত হাতেগোণা মাত্র কয়েকদিন কলেজে এসেছেন বলে শিক্ষকরা জানান। বক্তব্য নেয়ার জন্য অধ্যক্ষ আরিফ আহমেদ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ (বর্তমান শিক্ষক) আব্দুল্লাহ আল আজম বিকো জানান, এতদিন কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় অনত্র গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো। এবার থেকে কলেজের শহীদ মিনারেই মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। যদিও পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ শেষ হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এটি শেষ হলেই কলেজের প্রধান ফটক নির্মাণ শুরু হবে। পুনরায় এমপি হয়ে রেজাউল হক চৌধুরী কলেজটির দিকে দৃষ্টি দেয়ায় তাকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান সাবেক এই অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর কলেজে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। এরপর নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, at ২২:৩৬ (GMT+06) রূপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়