কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা, বেড়ে চলেছে মৃত্যুর হার। এই যেন এক অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণ, যা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায়, টিভি চ্যানেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটা দিনও থেমে নেই, বিরতি নেই এই ধারাবাহিকতার।
গতকাল ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে উঠে আসে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শুক্রবার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আলালপুর নামক স্থানে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জনসহ ঘটনাস্থলেই ৭ জন নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের সড়ক, মহাসড়কে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর তাণ্ডব অহরহ। সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রতিদিন সড়কে প্রায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন। যদিও বেসরকারি সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে আমাদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আইনের দুর্বল দিক, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া, উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের বাধা, সরকারের সদিচ্ছা ও আমাদের সচেতনতার অভাবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এতে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সর্বোচ্চ বাংলাদেশে।
দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী ৫ লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেট ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের নানা বাধা ও পুরনো পদ্ধতিতে এই আইন প্রয়োগের ফলে এই সেক্টরে কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও।
সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। তবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার হার ও মৃত্যু বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম হলো বিধিমালার দ্রুত প্রণয়ন। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। দুর্ঘটনার কারণগুলো আমলে নিয়ে সেই মোতাবেক কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।