টঙ্গীতে শিশুমৃত্যু
কিশোর সংশোধনাগারে অপরাধী কিশোরদের প্রতি বিরূপ আচরণ এবং নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। প্রায় গণমাধ্যমে দেশের তিনটি সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে নির্যাতন কিংবা মৃত্যুর খবর আমরা পাই। এমন ঘটনা দুঃখজনক। সর্বশেষ গাজীপুর টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়া এক কিশোর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। ওই কিশোরের নাম মারুফ আহমেদ (১৬)। তবে পরিবারের অভিযোগ, কেন্দ্রের ভেতরে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকালে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে ভর্তি করা হয়েছিল।
জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি খিলক্ষেত এলাকায় এক ঝালমুড়িওয়ালার সঙ্গে কয়েকজন ছেলের ঝগড়া হয়। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল মারুফ। তখন খিলক্ষেত থানা পুলিশ দুই ছেলের সঙ্গে মারুফকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২৮ জানুয়ারি কোর্টে চালান করে দেয়। খবর পেয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারেন, মারুফের নামে ডাকাতি মামলা হয়েছে। আদালত থেকে তাকে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গত ৮-১০ দিন আগে মা ইয়াসমিন বেগমকে নিয়ে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারুফের সঙ্গে দেখা করতে যান তার বাবা। তখন মারুফ কান্নাকাটি করে বলে, ‘বাবা আমি জীবনেও আর মারামারি, খারাপ কাজ করব না। তোমরা আমারে এখান থেকে নিয়ে যাও। ওরা আমাকে বাথরুম, থালা বাসন ধোয়ায়। না ধুইলে আমারে অনেক মারধর করে। এমতাবস্থায় মারুফ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার রক্ষার সনদে প্রথমদিকে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এই সনদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেসব শিশু অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের সঙ্গে সদাসর্বদা এমন আচরণ করতে হবে, যাতে শিশুর মর্যাদা রক্ষিত হয় এবং তারা যেন নিজেকে মূল্যবান ও মর্যাদাবান মনে করে। সেখানে আমরা তাদের পিটিয়ে হত্যা করছি। টঙ্গীর ঘটনাটি এরই খণ্ডিত দৃষ্টান্ত মাত্র।
বলা বাহুল্য, শিশু সংশোধনাগার করাই হয়েছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে যথাযথ গাইডেন্স, কাউন্সেলিং এবং গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে সংশোধন করে সুপথে নিয়ে আসার জন্য। পাশাপাশি তাদের পড়ালেখা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মক্ষম করে তুলে সমাজে পুনর্বাসিত করতে। কিন্তু কী হচ্ছে এসব কেন্দ্রে! খোঁজ-খবর কি আছে দায়িত্বশীলদের।
সংশোধনাগারে যে শিশু-কিশোরদের রাখা হয়, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বন্দি শিশুগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের লোকজন যখন নিজেরাই অত্যাচারী হয়ে ওঠে, তখন তো বলতেই হয় রক্ষকই ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও দেশে কেন শিশু নির্যাতন রোধ করা যাচ্ছে না- এরও উৎস সন্ধান দরকার। এ ব্যাপারে কোনো রকম কালক্ষেপণ কিংবা কোনো উদাসীনতা প্রদর্শনের অবকাশ নেই। অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে গভীর মনোযোগ দেয়া জরুরি মনে করি। দেশে বিপথগামী শিশু-কিশোরদের সংশোধন ও মূলধারায় ফেরানোর উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাও খুব জরুরি। আমরা মনে করি, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে সংশোধনের নামে যাতে শিশু-কিশোররা নির্যাতনের শিকার না হয়, তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।