নানা কর্মসূচিসহ প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধ ডাকার ঘোষণা
যশোরের শীর্ষ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে প্যানেল মেয়র-১ মোকসিমুল বারী অপুর নেতৃতে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয়া হয়। একই সাথে এদিন কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে যশোর পৌরসভার জনপ্রতিনিধিগণ। দাবি করা হয়েছে যশোরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে জনপ্রতিনিধিদের আটক ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের উর্দ্ধতন দুই কর্মকর্তাকে অপসারণ দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে একই দাবিতে আজ শুক্রবার মানববন্ধন, আগামিকাল শনিবার বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার শহরের দড়াটানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরপরও তাদের অপসারণ করা না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, যশোর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র শেখ মোকছিমুল বারী অপু। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, হৈতবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক, চুড়ামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন, উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সোহরাব হোসেন, রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ, যশোর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহিদুর রহমান রিপন, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেদ হোসেন নয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল।
এছাড়া, জনপ্রতিনিধিদের কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন, যশোর জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জবেদ আলী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্যানেল মেয়র-১ মোকসিমুল বারী অপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত নাগরিক সেবা আমরা জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূণের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করি। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আমরাই তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি। কিন্তু যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন আমাদের জনপ্রতিনিধিদের নানাভাবে হয়রানির মাধ্যমে সম্মানহানী করছেন। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিবর্তে জনপ্রতিনিধিদের জনসম্মুখে সম্মানহানি করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গত কয়েকদিন ধরে যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, রাজিবুল আলম, শাহেদ হোসেন নয়ন, সাহিদুর রহমান রিপনসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির অফিস ভাঙচুর করেছে পুলিশ। আর গত বুধবার রাতে সুনির্দিষ্ট কোন মামলা না থাকলেও কাউন্সিলর মিলনকে আটক করে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। কোন কিছু ঘটলেই এসব জনপ্রিয় কাউন্সিলরদের অফিস ও বাসভবনে হামলা করে পুলিশ। তাদের এই অপতৎপরতার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে যারা অপরাধী, সন্ত্রাসী তাদের আড়াল করা হচ্ছে। বেশ আগে থেকেই যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। চুরি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজী বেড়েছে। খুনের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। আমরা বরাবর ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের পক্ষে। এসব ঘটনার অধিকাংশ সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু সেই ফুটেজ অনুযায়ী আসামিদের আটক না করে অন্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে যুবলীগের বর্ধিত সভার দিন সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ, কাউন্সিলর সাহেদ হোসেন নয়নের উপর হামলাসহ অনেক ঘটনা রয়েছে, যার কোন মামলাই নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন থানায় গেলে ‘এসপির নির্দেশ আছে মামলা নেওয়া যাবে না’ বলে তাদের থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ২০২১
সালে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বাসভবনে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায় মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ব্যক্তি একটি মোবা ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কাছে সেই সিসি টিভি ফুটেজ সরবরাহ করা হয়েছিলো। কিন্তু আসামী আটক না করে সেই মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা যশোরে থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার সুযোগ নেই। তারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতির্ণ হয়েছেন। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যশোরের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্ত্বার জন্য পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অপসারণ দাবি করছি। এই দাবিতে আজ থেকে আমরা জনপ্রতিনিধিরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি। তাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। গত ৬ নভেম্বর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দারের পদোন্নতি হলেও তিনি অন্যত্র যোগদান না করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।