প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ৭:৪৭ অপরাহ্ণ আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরার তৃতীয় প্রকল্প ১৮ নম্বর সেক্টর। এখানে খালি প্লট দখল করে অবৈধ বাজার বসিয়েছে একটি দলীয় লেবাছধারী চক্র। যেখানে রয়েছে প্রায় ১৫০টির বেশি দোকান। দোকানিদের দেওয়া তথ্যমতে, চাঁদার টাকা আদায় করেন রুস্তম ও আনোয়ার। মাঝেমধ্যে তাদের নিয়োজিত কর্মীরা চাঁদা আদায়ের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন। ১৫০ টি দোকান থেকে দৈনিক গড়ে ৫০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন ৭৫০০০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। মাস শেষে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, দোকান বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি বাবদ অগ্রিম এককালীন দোকান ভেদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তুরাগ থানা শ্রমিক লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, জায়গাটি উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে নির্ধারিত। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ‘অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট’ এলাকার পশ্চিম পাশে পঞ্চপট্টি নামক স্থানে এই অবৈধ বাজার গড়ে উঠেছে। অবাক হওয়ার বিষয় হলো, উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউকের অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট প্রকল্পের পরিচালকের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মুখেই অবৈধ এই বাজারটি। খাবার হোটেল, শাকসবজি, মাছের দোকান, মিনি শিশুপার্ক উন্নতমানের কফিশপ ও চায়ের দোকান কি নেই সেখানে। এ ছাড়াও রয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানি বলেন, বাজারটি দেখভাল করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫২নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী, তার সহযোগী শ্রমিক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তুরাগ থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি সামছুল হক। অভিযোগ আছে, ওই বাজার থেকে ওঠা চাঁদার ভাগ যায় রাজউকের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের কাছে।
রাজউকের জায়গার ওপর দোকান বসিয়ে কি বলে তারা ভাড়া তোলেন জানতে চাইলে দোকানিরা বলেন, বাজার চালাতে নাকি অনেক জায়গায় টাকা দিতে হয় তাদের। এমন কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা উঠায়। রাজউকের জায়গায় আপনারা কার অনুমতিতে বাজার বসালেন এমন প্রশ্নে ৫২নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী প্রথমে অস্বীকার করেন। বলেন, মিথ্যা কথা- এগুলো উল্টাপাল্টা কথা। কোথায় পেয়েছেন বলে রেগে যান। আমার কাছে প্রমাণ আছে বলতেই বলেন, দোকানদারদের সঙ্গে নিয়ে নিজেরাই তৈরি করেছি। আমরাই চালাই। আমার নিজেরও দোকান আছে এখানে।
চাঁদা ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা তো চুনোপুঁটি লোকালভাবে থাকি। ওপরে লোক আছে। বাজার তো আর একজনের নেতৃত্বে চলে না ভাই। পাশেই গড়ে ওঠা রাজউকের অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে বসবাসকারীরা বলছেন, এই প্রকল্পে ৭৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে এখন বাস করে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ। প্রকল্পটির ভেতরে শুধু একটি সুপারশপ আছে। প্রকল্পটিতে কোনো কাঁচাবাজার না থাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাজারটিতেই তারা বাজার করেন।
এদিকে রাজউক বলছে, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের বাণিজ্যিক প্লটের জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ বাজারটি এখন পর্যন্ত তিনবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রতিবার উচ্ছেদের পর নতুন করে দোকান বসেছে। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের পক্ষ থেকে সংস্থাটির এস্টেট ও ভূমি-১ শাখাকে বাণিজ্যিক ওই প্লট নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় ১ ফেব্রুয়ারি।
প্রকল্পটির পরিচালক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার উচ্ছেদের জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খুব শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে বলে জানান, রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই বাজার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কথা একদমই সত্য না। যদি সাহস থাকে রাজউকের কে জড়িত নাম বলতে বলেন ওদের। শুধু বাজারই না নার্সারিও উচ্ছেদ করা হবে। আমি এই বাজারের সঙ্গে অনেকেরই নাম শুনেছি, জানি না তাদের জোর কোথায়? অভিযান চালানোর সময় কারো অনুরোধ আমি শুনব না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ বলেন, এই বাজার নিয়ে কথা বলার কোনো এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনের নেই। এটি রাজউকের এরিয়া। এটা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতে পারি না। যা বলার রাজউক বলবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ্ নুরীকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, at ১৯:৪৩ (GMT+06) রূপ/আক/ঢাঅ/আ.হা.
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।