কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নাসির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে তিনদিন বয়সী নবজাতক শিশু চুরি হয়ে যাওয়ার চারদিন পর অবশেষে উদ্ধার করেছে র্যাব। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গোয়ালগ্রাম মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি টিম। শিশুটিকে চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মা ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গোয়ালগ্রাম মোল্লাপাড়া এলাকার আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী মাফুজা খাতুন (৪০) ও তার মেয়ে পলিয়ারা খাতুন (২০)। পলিয়ারার স্বামী হানিফ মণ্ডল কাতার প্রবাসী। তাদের কোনো সন্তান নেই। তবে তারা শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশে চুরি করেন বলে র্যাব জানিয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুর বাবার নাম দিপু আলী ও মায়ের নাম সাফিয়া খাতুন রিয়া। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা উপজেলার মহিষাডোড়া গ্রামের মসজিদপাড়া এলাকায়। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আরিয়ান। বর্তমানে এক সপ্তাহ বয়সী আরিয়ানের নানা সাইদ আলী জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গায় আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে তিনদিন বয়সী তার নবজাতক নাতিকে চুরি করা হয়। ওই হাসপাতালের অন্য রোগীর অাত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রথমে শিশুটিকে কোলে নেন তাদের অপরিচিত এক নারী। পরে সুযোগ বুঝে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও র্যাব ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে।
রোববার রাত ৮টার দিকে শিশু আরিয়ানকে উদ্ধারের পর ওই রাতেই নাসির গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের সেবাপ্রতিষ্ঠান আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে মায়ের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করে র্যাব। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ আছে। নবজাতক সন্তানকে ফিরে পেয়ে মায়ের মুখে হাসি ফুটেছে। এতে পরিবারের সবাই এখন বেজায় খুশি। তারা আরিয়ানকে উদ্ধারকারী র্যাব সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে র্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
স্বজনরা জানান, ওই প্রতারক নারী হাসপাতালের এক রোগীর আত্মীয় পরিচয়ে সেখানে প্রবেশ করে শিশু চুরির ঘটনা ঘটান। ওই নারী নিজেকে নিঃসন্তান দাবি করে শিশু সন্তানটিকে তার নানির কাছ থেকে প্রথমে কোলে নেন। এরপর শিশুটির নানি রহিমা খাতুন হাসপাতালের বাইরে পানি আনতে গেলে প্রতারক নারী শিশুটিকে চুরি করে সটকে পড়েন। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চুরির চারদিন পর র্যাব শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়।
শিশু চুরির একদিন পর তার বাবা দিপু অালী বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার মা ও মেয়েকে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বজনরা প্রতারক পলিয়ারা খাতুন ও তার মা মাফুজা খাতুনসহ এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, দৌলতপুর উপজেলার ওই বেসরকারি শিশু হাসপাতালে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাফিয়া খাতুন নামে এক নারীর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান হয়। একদিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি তিনদিন বয়সী শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে কৌশলে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে শিশুটিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্তকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে র্যাব। রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার গোয়ালগ্রাম মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত মা-মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না সেটি খতিয়ে করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে চুরি হওয়ার চারদিন পর শিশুটিকে উদ্ধারের ঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সিপিসি-১, র্যাব-১২ কুষ্টিয়ার কোম্পানি কমান্ডার এম আবুল হাশেম সবুজ এই প্রেস ব্রিফিংয়ে শিশু চুরি ও উদ্ধার সম্পর্কে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য জানান। র্যাব বলছে, হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনার সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপহরণকারী চক্রের যোগসাজশ পেয়েছেন তারা। বিক্রির উদ্দেশ্যেই শিশু আরিয়ানকে অপহরণ করা হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।