ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে নারী বন্দিদের গর্ভবতী ও মা হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে রাজ্যজুড়ে। অনেকে মনে করছেন, এভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া এবং সন্তান জন্ম দেয়াকে নারীরা কারাগার থেকে বের হতে বিষয়টিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির মামলার শুনানি শুরু হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।
গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন আদালত।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বান্ধবকে (অ্যামিকাস কিউরি-আদালত বন্ধু) সঙ্গে নিয়ে সম্প্রতি কারাগার পরিদর্শন করেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি)। সেখানে তারা দেখতে পান, নারী বন্দি অন্তঃসত্ত্বা এবং ১৫ জন শিশু রয়েছে তাদের মায়ের সঙ্গে। এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর বলে মনে করছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা। কারাগারে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা কত তা খতিয়ে দেখারো নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রশ্ন উঠছে, জেলের নারী বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন কীভাবে। নারী বন্দিরা কি প্রেমে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন? নাকি তাদের অত্যাচার করা হচ্ছে? এমন সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কলকাতায়। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কারাগারেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন নারী বন্দিরা।
অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক কারাগারে অন্তত ১৯৬ শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তাদের পিতৃপরিচয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতি দেখে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। অনেকে মনে করছেন, এভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া এবং সন্তান জন্ম দেয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার একটি কৌশল।
আদালতে বিচারপতি বলেছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি নারী বন্দিরা কারাগারে থাকাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ, পুরুষ কর্মীদের সেখানে প্রবেশ নিষেধ করা হোক। নারী বন্দিদের কাছে যেনো যেতে না পারে।’
বিচারপতির এমন আদেশে ইতোমধ্যেই নাবালিকাদের জুভেনাইল গার্লস হোমে পুরুষ কর্মীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রেও একই নির্দেশ দিলেন বিচারপতিরা।
অন্যদিকে কোনো নারীকে কারাগারে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে তিনি অন্তঃসত্ত্বা কিনা সেটি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট আরেকটি মহল।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি কারাগারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ২০১৭ সালে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সূত্রেই সব কারাগার পরিদর্শন করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ অ্যামিকাস কিউরিকে দেয়া হয়। এরপরই উঠে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।