কেশবপুরে মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আগের সংবাদ

আবারো শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে বিপুল পরিমান ডলার জব্দ

পরের সংবাদ

যশোর বোর্ডে দুই বছরে ঝরে গেলো ৪৪ হাজার ৫২২ শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১০:৪৩ অপরাহ্ণ আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি শেষ করে ২০২২ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিলো ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) বসার কথা ছিলো তাদের। কিন্তু চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই বছরে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৩.৮০ শতাংশ। যার মধ্যে যশোর বোর্ডে ঝরে পড়েছে ৪৪ হাজার ৫২২ জন।

দুই বছরে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা গেলেও মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এ জায়গায় সরকারকে আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও ধরে রাখার জন্য সরকার প্রতি বছর উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই, খাবার দেয়াসহ অন্যান্য খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। এরপরও বিভিন্ন পর্যায়ে এতো অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী কেনো ঝরে পড়ছে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী তিন লাখ ১১ হাজার ৫১৩ জন।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সালে জেএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে নবম শ্রেণিতে (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) রেজিস্ট্রেশন করেছিলো ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এবার এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ জন। অর্থাৎ নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেও এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেনি পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রী আট লাখ ৯১ হাজার ৭২১ জন এবং ছাত্র আট লাখ ১৮ হাজার ৫৭৫ জন। অর্থাৎ তারা শিক্ষার মূলস্রোত থেকে হারিয়ে গেছে।

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, করোনার ধাক্কায় দেশে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে সব স্তরের শিক্ষায় প্রতি বছর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঝরে পড়ার প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করা জরুরি। সেজন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

তারা বলছেন, সমাজের অতিদরিদ্র ব্যক্তিটিও চান তার সন্তান লেখাপড়া করুক। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে দেশে যে ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, নোট-গাইড আর প্রাইভেট-কোচিংয়ের যে দৌরাত্ম্য চলছে, কম আয়ের পরিবারগুলো এ ধাক্কা সামলাতে পারছে না বলেই ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিলো ১১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭ মেয়ে। এসএসসির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে আট লাখ ৯১ হাজার ৭২১ জন। অর্থাৎ ঝরে পড়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ২৯৬ জন। অন্যদিকে, নবম শ্রেণিতে ছেলেরা রেজিস্ট্রেশন করেছিলো ১০ লাখ ৭০ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে এসএসসিতে ফরম পূরণ করেছে আট লাখ ১৮ হাজার ৫৭৫ জন। ঝরে পড়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ১৪১ জন। ছেলেদের তুলনায় মেয়ে ৩০ হাজার ১৫৫ জন বেশি ঝরে পড়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ স্তরের মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে। এ ছাড়া, শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অনেকে ঝরে পড়েছে।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এক থেকে একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দেবে তিন লাখ ১১ হাজার ৫৩৩ পরীক্ষার্থী। ফলে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে পরীক্ষায় বসবে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন।

অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের কেউ এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করেছিলো বা কাঙ্ক্ষিত নম্বর না পাওয়ায় মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেবে। এর মধ্যে এক বিষয়ের পরীক্ষা দেবে সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৯০ হাজার ৭৪৩ জন। দুই বিষয়ে পরীক্ষা দেবে ৫৯ হাজার ৫৪৫ জন। তিন বিষয়ের পরীক্ষা দেবে ১৯ হাজার ৩৩৫ জন, চার বিষয়ের পরীক্ষা দেবে পাঁচ হাজার ৬৫০ জন। নতুন করে সব বিষয়ে পরীক্ষা দেবে ৩৬ হাজার ২৬০ জন।
কোনো বোর্ডে কতজন ঝরে পড়লো-

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংখ্যাগত হিসাবে ঝরে পড়ার হারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সবচেয়ে এগিয়ে। ২০২২ সালে এ বোর্ডে চার লাখ ৩৫ হাজার ৬২৬ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৯২০ জন। ঝরে পড়েছে এক লাখ ৭০৬ জন। এভাবে রাজশাহী বোর্ডে ঝরে পড়েছে ৩৫ হাজার ২৯১ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৫৪ হাজার আটজন, যশোর বোর্ডে ৪৪ হাজার ৫২২।

জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, at ২২:৪০ (GMT+06) রূপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়