যশোরে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের সাথে চলছে শৈত প্রবাহ। তাপমাত্রা কমে গেলে মৃদু ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। এর মধ্যেই বুধবার দুপুরের পর থেকেই চলছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর যা মাঝারি বৃষ্টিতে পরিণত হয়েছে হালকা শীতের মাঝখানে বৃষ্টির ঝরনা শীতের অনুভুতিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে যদিও তাপমাত্রা খুব একটা বেশি না থাকলেও বৃষ্টির সাথে সাথে বাড়ছে শীতের অনুভুতি। এদিন যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শৈত প্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বভাস অনুযায়ী বুধবার শীতের মধ্যে বৃষ্টি নামে। কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এই বৃষ্টি যেন শীতের প্রতাপে পূর্ণতা এনে দিয়েছে। দিনের কিছু সময় সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঠান্ডার অনুভুতি কমছে না। মাঝে মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে জেলার ছিন্নমূল মানুষগুলোকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে পথে-ঘাটে থাকা এই মানুষগুলো দুর্বিষহ দিন পার করছেন।
যশোরে রেলস্টেশন ও ফুটপাতগুলোতে ছিন্নমূল মানুষকে কম্বল মুড়িয়ে অথবা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারন করতে দেখা গেছে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়, হাত-পায়ে মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে।
শামসুর রহমান নামে এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, একে তো তীব্র শীত, তার ওপর আবার বৃষ্টি। দুয়ে মিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় ইজিবাইক চালক নজরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। তার সঙ্গে বাতাস তো আছে। বৃষ্টি ও শীতে কারণে ইজিবাইক চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
মিজানুর রহমান নামে এক পথচারী বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে আজ শীতের তীব্রতা একটু বেশি। হাত পা শীতল হয়ে গেছে। গরম কাপড়ের সঙ্গে হাত মোজা, পায়ের মোজা পড়লেও স্বস্তি মিলছে না। আক্কাস আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, তিনটি শার্ট, দুটি প্যান্ট, মোজা পরেছি। সেই সঙ্গে মাফলার ও মাথায় টুপি দিয়ে কান মুখ ঢেকে রেখেছি। এরপরও শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছি। একটি ট্রিপ দিলে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে এত শীতের মধ্যেও বের হতে হয়েছে।
এদিকে, শীতের প্রকোপে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ বলেন, শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের চাপও বেড়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭০-৮০ ভাগই শীতজনিত কারণে অসুস্থ। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানান, জেলার অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিলো তার মধ্যে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৭৫ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সরকারি কম্বল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কম্বল বিতরণ করছে। তবে সেটা অনেক কম। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনকে শীতার্ত মানুষের মাঝে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বুধবার যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানুয়ারি মাস ধরেই সারাদেশের সাথেই যশোরে চলছে শৈত প্রবাহ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।