আইন অনুযায়ী এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলে। আইন অনুযায়ী, এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যায় না। তবে কোনো ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, (যেমন সন্তান না হওয়া বা অসুস্থতা ইত্যাদি) তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে ও তাঁর ভরণপোষণ না দেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ের নিবন্ধন হয় না। আর তাই প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়। এ অবস্থায় প্রতিকার পেতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪ এর বিধানমতে মামলা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা আদালতে দেখাতে হয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে স্বামী ৭ বছরের কারাদণ্ড ও উপযুক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারা মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি দিতে যেসব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো –
১. বর্তমান স্ত্রীর শারীরিক সমস্যা
২. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা
৩. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন
৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।
কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীরা আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।
দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানেরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে। এ ছাড়া অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাশাপাশি দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০এর ৪৯৪ বিধানমতে, স্বামী যদি স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিয়ে করেন তবে সেই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। তবে যে বিষয়টি এখানে উল্লেখ্য তা হলো বহুবিবাহের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।