কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকদের মারধর, হুমকি-ধমকি, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ২ জন অগ্নিদগ্ধসহ অন্তত ১০ জন কমবেশি আহত হয়েছেন। আহতরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ঈগল প্রতীকে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা পটলের পক্ষে ভোট করার অভিযোগে উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে আব্দুর রহিমের বাড়িতে সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে হামলা করা হয়। এ সময় আব্দুর রহিম ও তার বাবা আব্দুল হামিদ, মা রফাজাননেছা ও ছোট ভাই তুফানকে বেধড়ক মারপিট করে ওই বাড়ির ৪টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে আব্দুর রহিমের মা ও ছোট ভাই দগ্ধ হন।
আগুনে বাড়িটির বিভিন্ন ঘরের অাসবাবপত্র, ধান-চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজয়ী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর সমর্থকরা এই হামলা করেন বলে আক্রান্ত পরিবারটির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা ও পুলিশ সুপার আবদুর রকিব সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউএনওর কার্যালয়ে এসে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের দিন (রোববার) রাতেই উপজেলার তারাগুনিয়া হিসনা রোডে রানা আহমেদ ও খায়রুল ইসলামের দোকানে হামলা, রিফায়েতপুরে নৌকার কর্মী মুস্তাফিজুর রহমান সঞ্চয়ের বাড়িতে হামলা করা হয়। সোমবার সকালে কামালপুর বাজারে যুবলীগ নেতা শহীদ ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে বাধা ও হুমকি, পিয়ারপুরে নৌকার পক্ষে ভোট করায় মুক্তার হোসেন ও রামকৃষ্ণপুরে আইয়ুব অালী মেম্বারকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মথুরাপুর গ্রামে তরিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এছাড়া উপজেলার তেলিগাংদিয়া এলাকায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় ট্রাক প্রতীকের এক কর্মী রক্তাক্ত আহত হয়েছেন। নির্বাচন পরবর্তী এসব সহিংস ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন কমবেশি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতরা কুষ্টিয়া জেনারলে হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা পটলের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন অভিযোগ করেন, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বিজয়ী প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর লোকজন।
অপরদিকে উপজেলার চরসাদিপুর গ্রামে ট্রাক প্রতীকের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাদু আলী সরকারের ছেলে রফিকুল ইসলামের ট্রাক ভাঙচুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান মক্কেলের ছেলে কামরুল ইসলামের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের সমর্থক মনিরুল ইসলাম মেম্বার ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজনই আমাদের ট্রাক ও দোকানপাটে ভাঙচুর করেছেন। নিজেরদের দোষ আড়াল করতে তারা নিজেরাই গাড়ি ভাঙচুর করে আমাদের নাম দিচ্ছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।
ভেড়ামারা-দৌলতপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ সাংবাদিকদের জানান, জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ থাকলেও পিয়ারপুরে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ভোটকে কেন্দ্র করে ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য যেসব ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরী রোববার রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে কোনো সহিংসতায় না জড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘আমি দলমত নির্বিশেষে সবার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি৷ সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো আপনারা কেউ কোনো প্রকার সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবেন না। কেউ নিজ হাতে আইন তুলে নেবেন না। ইনশাআল্লাহ সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।