ভোটের ব্যালটে হিসাব-নিকাশে পড়বে অভিমত স্থানীয়দের
৪ দশকেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মেলেনি মণিরামপুরবাসির। বারবার হতাশ হয়েছেন তারা। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যালটে হিসাব-নিকাশে তার প্রভাব পড়বে ইঙ্গিত দিচ্ছেন স্থানীয়রা।
অতীতে ভোটের রাজনীতিতে জেলার অন্যান্য আসনের মত যশোর-৫ মনিরামপুর আসনেও নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আসনটি থেকে বিএনপি মাত্র ১ বার জিতলেও, ভবদহ দূর্গত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে অন্যান্য দলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও ক্ষমতায় এনেছেন একাধিকবার। কিন্তু ৪ দশকেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে ভোটারদের মুক্তি দিতে পারেননি কোন জনপ্রতিনিধি। এ অবস্থায় ভোটের ব্যালটে নতুন কিছু হিসাব নিকাশ করছেন এ সংসদীয় আসনের এ অঞ্চলে বাসিন্দারা।
যশোরের দুঃখ ভবদহ। দুর্গত এ অঞ্চলটির বড় একটি অংশ নিয়ে গঠিত যশোর-৫ মনিরামপুর আসন। আসনটি থেকে সর্বোচ্চ ৫ বার জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপি, জাতীয়পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ১ বার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২ বার করে জয় পেয়েছেন। এরমধ্যে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ১ বার করে জাতীয়পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ের হয়ে এবং ১ বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এদিকে, ২০১৪ সাল থেকে স্বপন ভট্টাচার্য্য সংসদ সদস্য থেকে বর্তমানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় ভোটার গৌরাঙ্গ পাল জানিয়েছেন, ভবদহ দুর্গত এ আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত। আসনটিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোটের রাজনীতি যেমন নির্ভর করে ভবদহকে কেন্দ্র করে, তেমনি নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটের ওপরও নির্ভর করতে হয় তাদেরকে। মশিহাটি গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রায় ৪ দশক ধরে বয়ে বেড়ানো ভবদহের অভিশাপ ঘোচাতে এখানকার মানুষেরা বারবার তাদের জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু তাদের দুঃখ লাঘব করতে পারেননি কেউই। তাই আমরা বারবার পরিবর্তনে প্রত্যাশা রাখি। ঝাপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম বাবু বলেন, বিভিন্ন সময়ের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এক কথায় আমরা এখানে জামাত-বিএনপির মত বাস করি আওয়ামী লীগ করেও।
মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি জিএম মজিদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়নমূলক অবস্থান, সেটাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান জনপ্রতিনিধি। ভবদহ অঞ্চলের মানুষের সাথে প্রতারণা হয়েছে। আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রকল্প এসেছিলো, সেসব কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিকাইল হোসেন বলেন, এখানকার মসানুষ লুটপাট, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অবহেলিত, বঞ্চিত হয়েছে। মানুষ এখন এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা এখন পরিবর্তন চায়। স্বতন্ত্র মোড়কে সে সুযোগ সাধারণ মানুষের সামনে এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচেতন নাগরিক কমিটির জেষ্ঠ্য নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সচেতন জনবান্ধব একজন জনপ্রতিনিধির প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। আমরা চাইবো, আমাদের যিনি সংসদ সদস্য হবেন, তিনি জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ করবেন। তাদের ভালোবাসবেন। দুর্নীতিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন গণতান্ত্রিক মানুষ হবেন।
জিল্লুর রহমান ভিটু আরো বলেন, কিন্তু আমরা এখন যে সমস্যা দেখি, যারা দুর্নীতিবাজ, যাদের টাকা আছে, তারা প্রার্থী হচ্ছেন। এভাবে জনগণের ওপর তারা চেপে বসেন এবং তারা নির্বাচিত হন। তারা আসলে রাজনীতির মাঠে বড় দলের সাথে থেকে এই সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি বলেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি কিংবা জনগণের কন্ঠ হয়ে কথা বলছেন, তা কিন্তু একেবারেই নয়। আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসেবে বিবেচিত হলেও এখানে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।