যশোর মনিরামপুরের রাজগঞ্জ বাজারে সংখ্যালঘু এক মুদি ব্যবসায়ীকে দোকানে ঢুকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের এক কলেজের অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। মারপিটের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আব্দুল লতিফ। তিনি উপজেলার রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং রাজগঞ্জ বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী হওয়ায় ওই বাজারে তাঁর আধিপত্য রয়েছে। মারপিটের শিকার ব্যক্তির নাম হাসুতোষ পাল। রাজগঞ্জ বাজারে তাঁর মুদি ও ধান চালের দোকান রয়েছে। রাজগঞ্জ বাজারে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের জায়গায় বস্তা রাখার অপরাধে আব্দুল লতিফ ব্যবসায়ী হাসুতোষ পালকে মারপিট করেছেন বলে অভিযোগ। মারপিটের ঘটনা হাসুতোষ পালের দোকানে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
ঘটনাটি চলতি মাসের ২৪ ডিসেম্বর সকালের হলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে ফেসবুকে ভিডিওটি ঘুরপাক খাচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে হাসুতোষ পালের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে গালমন্দ করছেন অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ। চিৎকার শুনে দোকান থেকে বেরিয়ে হাসুতোষ এগিয়ে গেলে অধ্যক্ষ তাঁকে চড় থাপ্পর মারা শুরু করেন। মারতে মারতে তিনি হাসুতোষকে দোকানের মধ্যে ঢুকেও কিলঘুষি মারতে থাকেন। ঘটনার ছয় দিন পার হলেও অধ্যক্ষর ভয়ে কোথাও অভিযোগ করতে পারেননি হাসুতোষ পাল।
হাসুতোষ পাল শুক্রবার সকালে বলেন, আমার দোকানের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। গত শনিবার দোকানে থাকা আধা বস্তা ধান আমি ভাস্কর্যের পাকার ওপর রেখে ভুল করে বাড়ি চলে যাই। রোববার সকালে দোকানে আসার পর আমাকে মারপিট শুরু করেন আব্দুল লতিফ। হাসুতোষ পাল বলেন, গেল বার নৌকা পাশ করার পর সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যর হাত ধরে রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সেক্রেটারি হয় আব্দুল লতিফ। আমরা দোকানদার কেউ তাঁকে ভোট দিইনি। আব্দুল লতিফ ক্ষমতার জোরে বাজারে যাকে তাকে মারধর করে। কয়দিন আগে আমার পাশের এক মুরগি দোকানদারকে মারতে চড়াও হয় সে।
তিনি আরো বলেন, আমি কোথাও অভিযোগ করিনি। যাঁরা ঘটনা জেনেছেন তাঁরা বলেছেন সংসদ ভোটের পরে বিষয়টি দেখবেন। জানতে চাইল অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মুদি দোকানি হাসুতোষ পালকে মারপিটের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আগেও হাসুতোষ দোকানের বস্তা এনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের জায়গায় রেখেছে। তাঁকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। গেল ১৬ ডিসেম্বর পুলিশ এসে বস্তা সরিয়ে ভাস্কর্যর জায়গা পরিষ্কার করেছে। এরপরও একই কাজ করায় হাসুতোষকে দুই থেকে তিন চড় মেরেছি।
রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি চালুয়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন, ঘটনা শুনে আমি দুই পক্ষের সাথে কথা বলেছি। আব্দুল লতিফ ঠিক কাজ করেননি। সংসদ নির্বাচনের পর বিষয়টি নিয়ে বসব। রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক বানী ইসরাইল বলেন, ঘটনা শুনেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেননি।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ভিডিও দেখিনি। ঘটনা লোকমুখে শুনেছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।