আওয়ামী লীগের ইশতেহার
‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’- এ অঙ্গীকার নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মতো ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে দলটি। ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী যেসব অঙ্গীকার করেছেন তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই। নবম সংসদ নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করার পর টানা ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করে চলেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিনবদলের সনদ’ সেøাগানে তাদের ইশতেহারে ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। এবারের ইশতেহারে যেসব বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ- দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো। আওয়ামী লীগের তিনটি নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রæত ইশতেহারের অধিকাংশই অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, পায়রাবন্দর নির্মাণ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প নির্মাণ করে বাংলাদেশ সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ একদিকে সম্মান অন্যদিকে চ্যালেঞ্জেরও। দুর্নীতি এখানে প্রধান বাধা। সার্বিক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে দুর্নীতি দূর হবে না এবং দুর্নীতি দূর করা না গেলে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা দুরূহ হবে। কারণ এ খাতের বেহাল দশার পেছনে কিছু ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী-কাম-রাজনীতিক এবং আমলা ও ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ কাজ করেছে। সরকার গত প্রায় দুই বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ব্যাংক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের নানা অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আছে। এবারে ইশতেহারে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়া এবং দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে, যা ইতিবাচক। কার্যকর ব্যবস্থাও দেখতে চাই। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে উন্নয়ন-শান্তি-সমৃদ্ধির যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা পূরণ হোক- এমন প্রত্যাশা রাখছি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।