সাবেক ও বর্তমান এমপির সঙ্গে সাবেক এমপিপুত্রের ত্রিমুখী লড়াই, সহিংসতার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

আবারো নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন শেখ আফিল উদ্দিন

পরের সংবাদ

ব্যালটে নৌকা নেই সাতক্ষীরা-২ আসনে, তবুও জয় নিয়ে টেনশনে জাপা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১০:২৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১০:২৬ অপরাহ্ণ

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন। মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এই আসন থেকে নৌকা প্রত্যাহারের পরও লাঙ্গলের জয় নিয়ে বেশ টেনশন শুরু হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

বিগত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী। লড়ছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে। জোরশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার পক্ষ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের আশরাফুজ্জামান আশুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, দলীয় মনোনয়ন পেয়েও শেষ মুহুর্ত্বে নৌকা হারানো প্রার্থী আলহাজ্ব আসাদুজ্জামান বাবুসহ দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবদি ছুটে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনী এলাকা। তারপরও অজানা এক আতংক কাজ করছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে। শেষ মূহুর্ত্বে কি হবে তাই নিয়ে বেশ টেনশনে আছেন তারা।

সাতক্ষীরা-২(সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী সরিয়ে নেয়ার পর ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও মূলত ভোট যুদ্ধ হবে লাঙ্গল ও ঈগল প্রার্থীর মধ্যেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে নামায় সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন। এখানে ১৩৮টি ভোট কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬০৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্যয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১৭ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৩৮৮ জন। এখানে হিজড়া ভোটার রয়েছে ৩ জন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তার পরিবর্তে এখানে দলীয় মনোনয়ন পান ক্লিন ইমেজ ও এলাকায় অধিকতর জনপ্রিয়, সদর উপজেলা পরিষদের টানা দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় সাতক্ষীরা-২ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। কিন্তু মহাজোটের আসন ভাগাভাগির জাতাকলে পড়ে বাদ পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত আসনটি তুলে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির হাতে। দলীয় মনোনয়ন পান জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু। এদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।

এছাড়া এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আফসার আলী, তৃণমূল বিএনপির মোস্তফা ফারহান মেহেদী, বিএনএম এর কামরুজ্জামান বুলু, এনপিপির আনোয়ার হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসান বাহার বুলবুল। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থন জানিয়ে এহসান বাহার বুলবুল নির্বাচন থেকে সরে দাড়নোর ঘোষনা দিয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর এই আসনে নতুন করে শুরু হয় হিসেব-নিকেশ। সবকিছুই যেন দ্রুত পাল্টাতে থাকে। নৌকার প্রার্থী বাবু থাকলে এই আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো না। কিন্তু নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করে নেয়ায় দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভের পরও সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, সরদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান আলী ও তাদের অনুসারীরা লাঙ্গলের পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই লাঙ্গলের প্রার্থীকে জয়ী করতে মরিয়া।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের অপর একটি গ্রুপ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসের, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদিকা জোৎনা আরা ও তাদের অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র ঈগল প্রতিকের পক্ষে জোর প্রচারে নেমেছে। ফলে রবির জয়ের সম্ভবনাও দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিক্ষক পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের কেউ লাঙ্গল আবার কেউবা ঈগলের পক্ষে কাজ করছে।

নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ ও সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশু আর রবির মধ্যেই এবার হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় মহাজোটের প্রার্থীর লাঙ্গল প্রতীকের জয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। তরুন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, আমার নেত্রী আমাকে নৌকার মাঝি করে পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে হয়েছে। তার পরও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছে আমি তার বাইরে নয়। মহাজোট প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশুকে জয়ী করতে মাঠে নেমেছি। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বাইরে কাউকে সমর্থন দেয়া বা কাজ করার কোন সুযোগ নেই। লাঙ্গলের পক্ষেই আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবির পক্ষে কাজ করছে। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

স্বতন্ত্রী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হয়েছি। এবার নৌকা না পেয়ে হয়েছি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমার কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়ে গেছে। এগুলো করতে চাই। সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছি। স্থানীয় নৌকা প্রত্যাহার করে নেয়ায় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ আমার সাথে রয়েছে। আমার বিশ্বাস আমি আবারও এমপি নির্বাচিত হবো। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, সাতক্ষীরা সদরে জাতীয় পার্টির একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। এর সাথে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। মানুষ লাঙ্গলে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শত ভাগ আশাবাদি।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিস্কার নির্দেশনা থাকার পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আমার বিরোধীতা করছে। এটা দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি আওয়ামী লীগের নেতারাই আমার বিরোধীতা করেন তাহলে মহাজোট করার মানে কি?

ডিসেম্বর ২৭: ২০২৩ at :২২:২৩(GMT+06) রুপ্র/আক/ঢাঅ/আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়