পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের গাঁন্ধুলিয়া গ্রামে অবস্থিত আল-আমিন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিবারতন্ত্রে বন্ধি হয়ে পড়েছে। ট্রাস্ট্রের নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পাদ থাকলেও তার কোন আয় ও ব্যয়ের হিসাব নেই কারো কাছে। ৭ সদস্য কমিটি’র সভাপতি ও মোতায়াল্লি (অভিভাবক পরিচালক) সহ ৬ জন একই পরিবারের রক্তের আত্মীয়-স্বজন। অন্য জন পদাধিকার বলে ট্রাস্ট্রের একটি দাখিল মাদ্রাসার সুপার সদস্য থাকলেও তাকে কখনো কোন মিটিং ও কোন সিদ্ধান্তে ডাকা হয় না। সে কারনে বছরের পর বছর তিনিও জানতে পারেনি ট্রাস্ট্রের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ। ফলে ট্রাস্ট্রের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম, দূর্নীতি আর সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন ক্ষোদ ট্রাস্টের সদস্য মাদ্রাসা সুপার ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ট্রাস্ট্রের সম্পদ, জমির হারি, দোকান ও বাসা ভাড়া থেকে বছরে ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা আয় হয়। এসব টাকা কোন ক্ষাতে ব্যয় হচ্ছে নাকি ব্যক্তি পকেটস্থ্য বা কোন সরকার বিরোধী নিষিদ্ধ ঘোষিক সংগঠনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না? সভাপতি ওমর ফারুক ও মোতায়াল্লি (অভিভাবক পরিচালক) হাফেজ আশরাফুলের বিরুদ্ধে এমন প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। ট্রাস্ট্রের নামে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধিন সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন না থাকায় বছরের পর বছর কোন অডিট হয় না। ট্রাস্ট সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে তারা সম্পুর্ন তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব আফাজ উদ্দিন তরফদার ১৯৮৪ সালে গান্ধুলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করেন আল-আমিন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে আফাজ উদ্দিন তরফদার তার মৃত্যুর আগে ট্রাস্টের নামে দলিলকৃত ২২ বিঘা জমি, ৭৬ শতক জমির উপর গান্ধুলিয়া দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, গান্ধুলিয়া আলিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও একটি এতিমখানা সহ খুলনা শহরের উপরে তিনতলা বিশিষ্ট একটি মার্কেটসহ বাড়ীর দলিল রেজিস্ট্রি করে দিয়ে যান। পরবর্তীতে এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নূরানী কিন্ডার গার্ডেন ও একটি ফুরকানিয়া (মক্তব) মাদ্রাসা।
এসব প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট্রে সম্পাদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালনার জন্য দলিলের একটি কলামে ৭ সদস্যের পরিচালনা কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে যান। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ট্রাস্টের কমিটিতে দুই জন দাতা পরিবার থেকে আর স্থানীয় চার জন অনান্য পদে ও পদাধিকার বলে গান্ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার হবেন প্রিন্সিপাল সদস্য। কিন্তু ট্রাস্টের ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি’র সভাপতি ওমর ফারুক তরফদার ও মোতায়াল্লি হাফেজ আশরাফুল তরফদার, সহ-সভাপতি বাবলু তরফদার তারা সবাই সভাপতির আপন চাচাত ভাই আর সহ-সভাপতি তৈয়বুর রহমান, কষাধ্যক্ষ ফয়সাল ফেরদাউস তরফতার সভাপতির ভাতিজা এছাড়া সদস্য শাহানারা রহমান সুমি হলো সহ-সভাপতি তৈয়বুরের কন্যা। কমিটির একমাত্র প্রিন্সিপাল সদস্য পদাধিকার বলে গান্ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার। যেখানে ট্রাস্ট্রের দলিলে দাতা পরিবার থেকে কমিটিতে ২ জনকে রাখার নিয়ম থাকলেও ৭ সদস্য কমিটির ৬ জনই একই পরিবারের রক্তের আত্মীয়-স্বজন। ফলে কোন জবাবদিহিতা না থাকায় সম্পূর্ন পরিবারতান্ত্রিক ভাবে অনিয়ম, দূর্নীতি আর সেচ্ছা চারিতার মাধ্যমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে ট্রাস্ট্রের কার্যক্রম।
ট্রাস্টের প্রিন্সিপাল সদস্য গান্ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার এবিএম আব্দুর রহমান ওসমানি জানান, আমি দীর্ঘ দিন মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্বে আছি। পদাধিকার বলে প্রিন্সিপাল সদস্য হলেও আল-আমিন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কয়েক কোটি টাকার সম্পাদ থাকলেও কোন ক্ষাতে এর আয়-ব্যয় হয় আমকে জানানো হয় না। আদেও কোন মিটিং হয় কি না? আমার জানা নেই। কারন সদস্য হয়েও আমাকে কোন দিন কোন মিটিংএ ডাকা হয়নি। কোন কিছু জানতে চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে নিবৃত করিয়ে দেন।
মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার কৃষি শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, মাদ্রাসার সুপার না থাকায় ২০২২ সালের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত পালন করেছি। সে সময় পদাধিকার বলে ট্রাস্ট্রের সদস্য হয়েও কোন দিন ট্রাস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে কোন কিছু জানতে পারেনি। কোন মিটিংএ আমাকে ডাকা হতো না। অথচ ট্রাস্টের নামে ২২ বিঘা জমির হারি থেকে বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া খুলনা শহরে শংক হল সংলগ্ন তিন তলা বাড়ীসহ নীচে মার্কেট রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা ভাড়া উত্তলোন করা হয়। এই দুই খাত থেকে বছরে দাড়ায় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা ।এসব টাকা একাউন্টে জমা করা হয় কিনা আমার জানানেই। মাদ্রাসা খাতে ব্যয় করার কথা থাকলেও তারা সঠিক ভাবে মাদ্রাসার উন্নয়নসহ ট্রাস্ট্রের অনান্য প্রতিষ্ঠানে খুব বেশি ব্যয় করতে দেখা যায় না।
রতনপুর বাজারের দোকানদার আব্দুর রহিম, এলাকার বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ গাজীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আল-আমিন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অনিয়ম, দূর্নীতি দীর্ঘ দিনের। ট্রাস্ট্রের ২২ বিঘা জমি কমিটির সভাপতির ভাতিজা কষাধ্যক্ষ ফয়সাল ফেরদাউস তরফতাদের দখলে নিয়ে নামমাত্র মূল্যে হারি দিয়ে কৌশলে সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করছে। ট্রাস্ট্রে জমি হারি দেওয়ার জন্য ওপেন ডাকের মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কমিটির লোকজন নিজেরা নিয়ম বহিরভূত ভাবে লুট-পাট করে খাচ্ছে। এছাড়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদটিও তারা আকড়ে ধরতে নির্বাচনী কাজে ট্রাস্টের অর্জিত অর্থ ব্যয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ করেন বলে অভিযোগ তোলেন।
এ বিষয়ে আল-আমিন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি ওমর ফারুক তরফদার ও মোতায়াল্লি হাফেজ আশরাফুল তরফদারের নিকট ট্রাস্ট্রের সম্পদ থেকে মাসিক ও বার্ষরীক কত টাকা আয় হয় জানতে চাইলে কাউকে বলা যাবে না বলে সাব জানিয়ে দেন তিনি। বছরে সরকারি ভাবে অডিট হয় কিনা জানতে চাইলে সে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এটা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এটা যে ভাবে আমরা পরিচালনা করবো সে ভাবে পরিচালিত হবে। সরকারি ভারে রেজিট্রেশনের কথা বলা হলেও করা হয়নি বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।