পক্ষে-বিপক্ষের নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ করা হয় প্রতিবাদ মিছিল
শার্শায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটনের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এ ঘটনার জেরে লিটনের পক্ষের ও বিপক্ষের নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৮ থেকে ১০ জন। মঙ্গলবার সকালে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বেনাপোলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দফায় দফায় প্রতিবাদ মিছিল করেন বন্দরের শ্রমিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কুশলবিনিময়ের এক পর্যায়ে বন্দর এলাকায় হঠাৎ কয়েকজন শ্রমিক স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটনের ওপর চড়াও হয়। এ সময় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তে বন্দর নগরী বেনাপোল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আশপাশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
মেয়র লিটন বলেন, পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মন্টু, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আজিবারসহ ১০-১২ জন মারাত্মক আহত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় বন্দরের তিন শ্রমিককে আচরণবিধি না মানায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী।
এ ঘটনার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন ও তার কর্মী-সমর্থকেরা বেনাপোল বাজারে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সকালে বেনাপোল বন্দরের দুই নম্বর গেটের সামনে নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা গালিগালাজসহ আমার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ১০ নেতাকর্মী আহত হন। আমি কৌশলে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। আমাদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
তিরি আরও বলেন, ভোটাররা আমাকে ভোট দিতে চায়। কিন্তু আমার সমর্থকরা যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায় সেজন্য এখন থেকেই সন্ত্রাসীরা তাদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমি এ আসনে নিরপেক্ষ ভোট হওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বন্দরের ৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন আমাদের কাছে ভোট চাইলে তাকে বলি, নৌকার প্রার্থী ছাড়া কাউকে ভোট দেব না। তুমি আগে এ বন্দরে বোমা মেরেছো, শ্রমিকদের মেরে আহত করেছ, তাই তোমাকে ভোট দেব না। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে লিটন আমাকে চড়-থাবা মারতে থাকেন। এসময় অন্যান্য শ্রমিকরা এসে তাদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যান। এ বিষয়ে যশোর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন বলেন, সকালে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বন্দরের শ্রমিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে যান। এসময় হঠাৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা রশীদ ও রাজু সর্দার তাদের ওপর চড়াও হয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করা হয়। এতে তিনিসহ ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে, এ ঘটনার পর বন্দরের দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এরপর পক্ষে বিপক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেন বন্দরের শ্রমিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (৯২৫) সাধারণ সস্পাদক অহিদুজ্জান অহিদ জানান, উনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন) এসে উত্তেজিত হয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। বেনাপোল বন্দরে বিগত দিনে সে (স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন) যে ঘটনা ঘটিয়েছিল, সে ঘটনার কারণে শ্রমিকরা তার ওপর রাগান্বিত ছিল। সে আক্রোশমূলক ব্যবহার করছে। একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে তার কাছ থেকে এটা কাম্য নয়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, এখানে দুপক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না হয় সে বিষয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি। অন্যথায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দু‘পক্ষকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচনী প্রচারণাসহ অন্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে।
জানা যায়, বন্দরের হ্যান্ডলিং কাজের টেন্ডারের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিটন ও এমপি আফিল সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ, সংঘর্ষ চলে আসছে। বন্দরের শ্রমিকরা এমপি আফিল উদ্দিনের সমর্থক বলে পরিচিত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।