মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করার জন্য
নড়াইলের লোহাগড়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করার জন্য নাতী নাতনীদের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শোনান মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দানকারী জাহানারা বেগম। প্রতি বছর বিজয়ের মাসে ছুটে আসে নাতী নাতনীরা মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুনতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দানকারী জাহানারা বেগমের বাড়ি রাজুপুর। নড়াইলের লোহাগড়ার রাজুপুর গ্রামের (পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড) শেখ আফসার উদ্দীনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৮২)। বয়স তাকে হার মানতে দেয়না। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে অপেক্ষায় থাকেন নাতী-নাতনীদের জন্য।
তার ছেলে মেয়ে নাতী নাতনীরা কেউ ঢাকা, কেহ চট্রগ্রাম, কেউ খুলনা যশোহর কেউ নড়াইল শহরে বসবাস করেন। ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা শেষে নাতী-নাতনীরা ছুটে আসে তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুনতে। দাদীও অপেক্ষায় থাকেন তাদের জন্য। তিনি বিগত ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে উঠান বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শোনানো শুরু করলেও ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুনিয়ে আসছিলেন। এবার নাতী নাতনীরা তার কাছে বায়না ধরেছে তারা মুক্তিযুদ্ধে ডাক দেওয়া সেই মহানায়ক জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া যাবে।
বঙ্গবন্ধুকে তারা না দেখলেও তার সমাধিতে জিয়ারত করতে যাবে সকলে। যদিও পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা অনেকবার জাতীর পিতার সমাধিতে জিয়ারত করেছেন। কিন্তু ছোটদের অনেকেরই জিয়ারত করা হয়নি। তাই এ বছর ডিসেম্বরে তাদের সকলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করার ইচ্ছা তার। কিন্তু বিরোধী দলের হরতাল অবরোধে তার ইচ্ছাটা অনেকটা বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি জানান বয়স হয়েছে, জানিনা আর ক’দিন বাঁচবো। জাতীর পিতার মাজারে সবাইকে নিয়ে যেতে পারলে খুশী হতাম। তিনি আরো জানান, আমাদের মত যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীরা আছেন, তাদের প্রত্যেকের উচিৎ ঘরে ঘরে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। কারন পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা এখনো আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে এই নির্ভীক নারী জাহানারা বেগম ১৫/২০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে ১মাসের অধিক সময় জীবনের ঝুকি নিয়ে নিজের বাড়িতে আশ্রয়দান ও তাদের নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারে নিরাপত্তার জন্য নিজের ছেলেদের বাড়ির বাইরে পাহারায় রাখতেন।
জাহানারা বেগমের বাড়ি আশ্রয় গ্রহনকারীদের পৌরসভার গোপীনাথপুর গ্রামের সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রেজাউল ইসলাম খান বলেন, রাজুপুর গ্রামের জাহানারা বেগম (আমরা আপা বলতাম) মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমাদের থাকা খাওয়ার এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর হত। আমরা ১৫/২০ জনের একটি দল প্রায় ১মাসের অধিক সময় তার আশ্রয়ে ছিলাম। যাদের বাড়ি উপজেলার লক্ষীপাশা, গোপীনাথপুর, কোলা দিঘলিযা, কুমড়ি, তালবাড়িয়া, চাচই, মরিচপাশাসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল।
এখনো তাদের মধ্যে অনেকে বেঁচে আছেন, আবার অনেকে মারা গেছেন। তার ঋণ (জাহানারা আপার) আমরা কোনদিন শোধ করতে পারবো না। জাহানার আপার ভিতর প্রতিদানের কোন আশা না থাকায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য কোন দৌড়ঝাপ করেননি। তার মত বীরাঙ্গনার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ভুক্ত হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অবদানের স্বীকৃতির জন্য জোর সুপারিশ জানাই। জাহানারা বেগমের বড় ছেলে তরিকুল ইসলাম বলেন,আমার মা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অটুট থাকার জন্য যে কাজটি করে যাচ্ছেন আমরাও ৭ (সাত) ভাইবোনসহ সকল প্রজন্ম সে ধারাবহিকতা ধরে রাখবো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।