নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের কাহিনি জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন ও ধারণ করে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। কাজে-কর্মে, চিন্তাচেতনায় দেশপ্রেম থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে এসে আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন কথা বললেন একাত্তরের রণাঙ্গের যোদ্ধা এবং দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক ও প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা।
তার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন গল্প ও কাহিনী শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে আইডিয়ানের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিজয়ের ৫২ বর্ষ পূর্তিতে তরুণ প্রজন্মের উপলদ্ধিতে ‘কথা -৭১’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের ইন্টার্নশীপ (১ম ব্যাচ) সদস্যরা। অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের নানা কাহিনি ও সহযোদ্ধা মুক্তিবাহিনীদের নানা কাহিনী শোনান মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা। তিনি মুক্তিযোদ্ধাকালীন বৃহত্তর যশোরের নিউক্লিয়াস বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৮ নাম্বার সেক্টরে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন লোমহর্ষক যুদ্ধের মুখোমুখির কাহিনী জানান। একাত্তরের অগ্নিঝরা রণাঙ্গনের বিভিন্ন গল্প যখন শোনাচ্ছিলেন, তখন আইডিয়ার মিলনায়তন ছিল পিনপতন নীরবতা। তেজোদীপ্ত লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনে কখনো শিহরিত হচ্ছিল, কখনো মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনি শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিল শিক্ষার্থীরা।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কোন একদিন বা এক প্রজন্মের গাঁথা নয়; বরং এ বাঙালি জাতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব সময়ের গৌরবগাঁথা। পাঠ্যপুস্তকে আমরা যা পড়েছি বা যে ইতিহাস শুনেছি তা নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক; কিন্তু আজ এই শিক্ষার্থীরা নিজেরা খুঁজে যে কাহিনি তুলে আনলো তা আরো বেশি নাড়া দিবে। এমন সহস্র কাহিনী প্রতি পরিবারের জীবনেই ঘটেছিলো, আমরা যদি আইডিয়ার মতো চিন্তা করে এই ঘটনা গুলোকে সামনে আনতে পারি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এগুলো সংরক্ষিত করা সম্ভব হবে। আইডিয়ার এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’ এসময় সরাসরি রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে পেরে উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও গর্ববোধ করে।
আইডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদৃষ্টা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। সভাপতির বক্তব্যকালে তিনি বলেন, ‘কথা-৭১’ মূলত ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া বাস্তব কাহীনিকে তুলে নিয়ে আসার এক অভিনব প্রয়াস। শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেছে তাদের পরিবারে ও আশেপাশে ৭১-সালে ঘটে যাওয়া কাহিনীকে তুলে আনতে। এর মধ্যে দিয়ে বর্তমান প্রজন্ম নিজেরায় যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ হচ্ছে আরো অজানা কাহিনি। এই আত্মত্যাগ, নির্যাতন এর গল্পগুলো শুধু কাহিনী নয়, বাঙালি জাতির গর্ব, অহংকার। তাই কাহিনীকে সংরক্ষণের চেষ্টা করতেই এই আয়োজন।’ এর আগে অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মূলত তাদের এলাকায় অথবা নিজেদের আত্মীয়ের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের বাস্তব ঘটনা তুলে আনে। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বিধান প্রামাণিক, সানজিদা, নাফিজ ইমতিয়াজ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোমা খান, সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, আইডিয়া স্পোকেনের সমন্বয়ক নাবিলা সুলতানা, উইনির সিইও মল্লিকা আফরোজসহ আইডিয়ার সকল স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ।
আইডিয়া ইন্টার্নশিপ ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকাশ ইসলাম বলেন, “আজকের দিনের অনুভূতি সত্যিই আলাদা। বিজয়ের দিন যেমন গর্বের, তেমনি এই অনুষ্ঠানকে আমরা আয়োজন করেছি এটিও আনন্দের। অনেক ভালো লাগছে। আরেক শিক্ষার্থী উষা খাতুন বলেন, “সব সময় বিজয় দিবস কে কেন্দ্র করে শুনেছি পাঠ্য বইয়ের অথবা ইতিহাসের পাতায় থাকা গল্পগুলো। কিন্তু আজকের দিন ভিন্ন, কারণ আজ আমাদের পরিচিত পরিবারে ঘটে যাওয়া অজানা কাহিনীই শুনছি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথামালা।’ আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তানজিয়া জাহান বলেন, ‘বিজয়ের মাস আমাদের জন্য আবেগের, আমাদের জন্য আনন্দের। তবে কীভাবে উদযাপন করলে তা পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখবে এটিই ভাবার বিষয়। এই মাহাত্ম্যকথা যেন প্রত্যেক বাঙালির ঘরে ঘরে আজকের দিনে বলা হয়, এই আমাদের কাম্য।” আইডিয়া ইন্টার্নশিপ অন সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়ক মিতালি বালা বলেন, ‘এটি চমৎকার অনুভূতি। আইডিয়া সবসময় ভিন্ন কিছু আয়োজনের চেষ্টা করে, এবারো তাই। তবে এবারের আয়োজন করেছে আইডিয়ার সবচেয়ে ছোট মানুষেরা। ইন্টার্নশিপ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্টের উপর সেশন নেওয়া হয়েছিলো এবং তার ই প্র্যাক্টিকাল টাস্ক হিসেবে এই অনুষ্ঠান ওরা আয়োজন করছে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।