মুজিবনগরে মরিচের বস্তায় পাওয়া গেলো ৫ কেজি গাঁজা

আগের সংবাদ

বেনাপোলে একই দড়িতে স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা

পরের সংবাদ

প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্মৃতি সংরক্ষনের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের

আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর খুলনা হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩ , ৮:১১ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩ , ৮:১১ অপরাহ্ণ

আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর। খুলনা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালীর বিজয় অর্জিত হলেও পাকবাহিনীর কবল থেকে খুলনা মুক্ত হয়েছিলো ১৭ ডিসেম্বর। এই দিনে শিরোমনি এলাকায় মুক্তিসেনাদের কাছে একহাজার পাক বাহিনী আত্মসর্ম্পণ করে। এ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত বিজয়ের আনন্দে ফেঁটে পড়েন খুলনাবাসী। এ দিনটি উপলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন পেষাজীবি সংগঠন নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিবাহিনীর তুমুল আক্রমনে যশোর ক্যান্টম্যান্ট ছেড়ে পিছুহটে পাক সেনারা। মংলা বন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে যশোর থেকে নওয়াপাড়া এলাকায় আশ্রয় নেয় তারা। পরে ৯ ডিসেম্বর খুলনার দিকে খুলনা শিরোমনিসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয় পাকহানাদার বাহিনী। ট্যাংক, কামান, সাজোয়াবহর আর গোলাবারদসহ খুলনার শিরোমনি, ষ্টার্ণগেট ও ফুলবাড়িগেট এলাকায় ঘাটি স্থাপন করে তারা। একে একে গোটা এলাকা দখল করে নিয়ে নির্যাতন চালায় সাধারন মানুষের উপর। নির্বিচারে গুলি করে মারতে থাকে নিরীহ এই বাঙ্গালীদের। প্রান বাচাতে তারা ঘর বাড়ি ফেলে চলে যায় পাশ্ববর্তী ভৈরব নদীর ওপার। এক পর্যায়ে জনশুন্য হয়ে পড়ে এ এলাকা।

১২ ডিসেম্বর সকালে হঠাৎ করে পাকসেনাদের এই ঘাটিতে চারিদিক থেকে আক্রমন চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিসেনাদের সাড়াশি আক্রমনে দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় পাক বাহিনী। ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে শিরোমনি এলাকায় ৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জু ও মিত্র বাহিনীর প্রধান কে এম সিং‘র কাছে পাক বাহিনীর ৩ হাজার ৭শ পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী মুহুর্তে আত্মসর্ম্পনের দলিলে স্বাক্ষর করছিল ঠিক সেই মুহুর্তেও পাক বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে মোকাবেলা করতে হয়েছে খুলনাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের। এ সকল যুদ্ধের মধ্যে শিরোমনি ট্যাংক যুদ্ধ, কপিলমুনি, বটিয়াঘাটা, বেতার কেন্দ্র মুক্ত যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ছিলো অন্যতম। ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর খুলনার অনেক স্থানে মিত্র বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাতেই বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরে আসতে শুরু করে। ১৭ ডিসেম্বর বিকালে সার্কিট হাউসে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে মিত্র বাহিনীর মেজর দলবীর সিং‘র কাছে পাক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার স.ম রেজওয়ান জানান, মুক্তিবাহিনীর তুমুল আক্রমনে যশোর ক্যান্টম্যান্ট ছেড়ে ৮ ডিসেম্বর নওয়াপাড়া হয়ে খুলনার দিকে আসে পাকহানাদার বাহিনী। ৯ ডিসেম্বর পাকহানারা ট্যাংক, কামান, সাজোয়াবহর আর গোলাবারদ সহ খুলনার শিরোমনি, ইষ্টার্ণগেট ও ফুলবাড়িগেট এলাকায় ঘাটি স্থাপন করে তারা। ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে শিরোমনি এলাকায় পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

খুলনা মুক্ত দিসব সম্পর্কে খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনী প্রধান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, বিজয়ের প্রাক্কালে খুলনা এলাকায় পাক বাহিনী প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারদে সজ্জিত ছিলো। তবে অপ্রতিরোধ্য মিত্র বাহিনী ও মুক্তিসেনাদের সাড়াশি আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়ে বর্বর পাক বাহিনী। তাদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে ধ্বংস যজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং টেলিফোন বিভাগের ভিএইচএফ’র উচ্চ টাওয়ার এক্সক্লুসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু কোন কিছুই তাদের শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি।

এদিকে খুলনা হাদিস পার্কে মুক্তিবাহিনীর আরেকটি দল ওই সময়ে অবস্থান নেয়। এই দলটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকু, ইউনুস আলী ইনু, স.ম বাবর আলী এবং শেখ আব্দুল কাইয়ুমসহ অন্যান্যরা ছিলেন।

পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগে এই মুক্তিযোদ্ধারা রূপসা হয়ে হাদিস পার্কে উপস্থিত হন বলে জানান, মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহিদুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, খুলনামুক্ত দিবসের প্রক্কালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মিত্র বাহিনীর ব্যাপক ধ্বংষ যোজ্ঞ শুরু করে। হানাদার বানিহী নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভিএইচএফ টাওয়ার এক্সক্লুসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয়। পাকসেনাদের আত্মসর্ম্পণের মধ্যদিয়ে খুলনাবাসী বিজয়ের আস্বাদ পান। তবে খুলনার শিরোমনি যুদ্ধে ৩ হাজার ৭শ পাকসেনা আত্মসমর্পণ করলেও এখনো পর্যন্ত সেখানে নির্মান করা হয়নি কোন স্মৃতি ফলক। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ওই স্থানে স্মৃতি সংরক্ষনের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের।

এ দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ বিভিন্ন পেষাজীবি সংগঠন নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়