জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস কক্ষে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

আগের সংবাদ

মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৪

পরের সংবাদ

এসিল্যান্ড অফিসের পাশে নদী থেকে বালু তোলাচ্ছেন প্যানেল মেয়র

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ , ৮:৫৯ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ , ৯:৪৫ অপরাহ্ণ

মনিরামপুরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সংলগ্ন হরিহরনদীতে মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু তুলছে একটি চক্র। মনিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল শ্রমিক খাটিয়ে বালু তুলে পৌরসভার মাঠ ভরাট করছেন। এর আগে একই স্থান থেকে বালু তুলে এসিল্যান্ড অফিস সংলগ্ন প্রভাতী বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করেছেন তিনি।

প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামানের দাবি, পৌরসভার স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটে অনুমতি নেওয়া ছিল। তবে, কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন সেটা বলেননি তিনি।

এদিকে নদী খুঁড়ে বালু তোলায় ক্ষতির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হরিহরনদীর পাড়ের তাহেরপুর এলাকার বাসিন্দারা। কোন প্রতিকার না হওয়ায় উদ্বিগ্ন তাঁরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এমন অনিয়মে হতাশ পরিবারগুলো।

স্থানীয়রা জানান, গেল নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসিল্যান্ড অফিসের ঠিক নিচে হরিহরনদীতে বালু তোলার দুইটি যন্ত্র বসানো হয় প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে। তাহেরপুর এলাকার রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বালু তোলার কাজে নিয়োজিত আছেন। প্রতিরাতে ৮টার দিকে বালু তোলা শুরু হয়ে বন্ধ হয় ভোর বেলায়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে নদীতে বালু তোলা যন্ত্র ফেলানো থাকে।

সূত্র বলছে, নদী থেকে পাইপে বালু টেনে এনে প্রথমে প্রভাতী বিদ্যাপীঠের নতুন ভবনের ভেতরে ও মাঠে ভরাট করা হয়েছে। এখন পাকা সড়কের উপর দিয়ে পাইপ টেনে নদীর বালু দিয়ে পৌরসভার মাঠ ভরাটের কাজ চলমান আছে। অভিযোগকারীদের একজন প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন। তিনি বলেন, হরিহরনদীর পাড়ে আমার দোতলা বাড়ি। যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে তাতে যে কোন সময় আমাদের বাড়িঘর ধসে নদীতে পড়ার আশঙ্কা করছি। বালু তোলা বন্ধ করার জন্য আমরা নদীর পশ্চিম পাড়ের পাঁচ-সাত জন বাসিন্দা ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। একদিন রাতে মেশিন চলার সময় আমি এসিল্যান্ডকে ফোনে জানাইছি। তারপরও বালু তোলা বন্ধ হচ্ছে না।

বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত তাহেরপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, পৌরসভার মাঠ সমান করাচ্ছেন মেয়র। প্যানেল মেয়র সাথে আছেন। আমরা চারজন শ্রমিক তাঁর কাজ করছি। দুইটা মেশিন দিয়ে তিনদিন পৌরসভার মাঠে ২৫-৩০ ট্রাক বালু তুলিছি। প্রাইমারী স্কুলে ৩০ ট্রাক তোলা হয়েছে। রাতে বেশি সময় বালু তোলা হয়।

জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, কারো ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যাবে না। পৌরসভার স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছে। সাংবাদিক হলেও বিষয়টি আপনারা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

কামরুজ্জামান কামরুল আরো বলেন, প্রভাতী বিদ্যাপীঠের মাঠে বালু তোলার সময় অনুমতি নিয়ে করেছি। পৌরসভার মাঠের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি।

মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, মাটি ফেলে পৌরসভার মাঠ ভরাট করেছি। আগে ওরা স্কুুলের মাঠ ভরাট করেছে। সেখান থেকে লাইন টেনে একদিন মাত্র পৌরসভার মাঠে বালু ফেলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রভাতী বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ পেয়েছেন প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান। কক্ষের ভিতরে ও মাঠ ভরাটে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও তিনি নদী থেকে বালু তুলে মাঠ ভরাট করেছেন। এরপর কামরুজ্জামান ওই মেশিন দিয়ে হরিহর নদীর একই স্থান থেকে বালু তুলে চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরসভার নবনির্মিত তিন তলা নতুন ভবনের সামনের মাঠ ভরাটের কাজ করছেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম। প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খোঁজ নিয়ে বালু তোলার বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, নদী থেকে বালু তোলার ব্যাপারে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি দেখছি।

ডিসেম্বর ১৩:২০২৩ : at, ০৮:৫৩(GMT+06)আ.হা.

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়