ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে এবারো নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে যাচাই-বাছাই কাজ শেষে তার প্রার্থীতা বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে পাঁচ বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ ( শৈলপুকা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনের পর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর ও তার স্ত্রীর নগদ অর্থ এবং সম্পদ দুটই বেড়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামাতে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাই (এমপি) ও তার স্ত্রীর মূলধন, স্থাবর অস্থাবর, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭শত ৭৬ টাকা ৬০ পয়সা। নিজের ২০ ভরি স্বর্ণের মূল্য দেখানো হয়েছে ৮০ হাজার টাকা এবং ১টি শট গানের মূল্য দেখানো হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। যা ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেওয়া হলফনামাতে নগদ টাকাসহ মূলধন দাড়িয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪শত ৯৮ টাকা। এছাড়াও স্বর্ণের পরিমাণ একই ২০ ভরি যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর উপহার পাওয়া স্বর্ণ ৩০ ভরি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামাতে কৃষি খাত ও ব্যবস্যা থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে। যা ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কৃষি খাত, ব্যবস্যা ও এমপি সম্মানী থেকে বার্ষিক ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে। ওই সময়ে ঢাকাতে কোন জমি বা প্লট না থাকলেও বর্তমানে ঢাকার ডেমরা ও পূর্বাঞ্চলে তার তিনটি প্লট রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোননয় পত্রের সাথে জমা দেওয়া হলফনামা, ছাড়াও নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। যা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের থেকেও কয়েক গুণ বেশি।
আব্দুল আই এমপি’র আয়ের বড় উৎস ব্যবসা ও এমপি সম্মানী ভাতা। তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, কৃষি থেকে ৩০ হাজার টাকা, ব্যবস্যা থেকে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা, এমপি সম্মানী হিসেবে ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এই হিসেবে তাঁর আয়ের বড় অংশটিই আসে সম্মানী ভাতা থেকে। তাঁর বর্তামান নগদ ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭শত ৪৯ টাকা রয়েছে, যা নবম সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দশম নির্বাচনের সময় নগদ ছিল ৬ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একাদশ নির্বাচনে নগদ ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৬শত ৬১ টাকা ও ব্যাংকে জমা ছিল ৯ লাখ টাকা।
এছাড়া বর্তমান দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাঁর ব্যাংকে আছে ২ কোটি ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭শত ৪৯ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০ লাখ টাকা। দুইটা জীপ গাড়ি দেখানো হয়েছে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে কোন গাড়ি নাই। তবে স্ত্রীর নগদ ১২ লাখ টাকা ও উপহার পাওয়া ৩০ ভরি স্বর্ণ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও স্ত্রীর নামে ঝিনাইদহ শহরে ২৫ শতক জমি দেখানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত হলফনামা ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত হলফনামা বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল হাই যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, তাতে নগদ ও ব্যাংকে জমা ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিলো। তখন তিনি কোন গাড়ির মালিক ছিলেন না, ঢাকাতেও কোন জমি ছিল না। তবে কৃষি জমি ও ব্যবসা থেকে আয় ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। দশম জাতীয় নির্বাচনে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার সম্পাদের হিসাব পাওয়া যায়। এছাড়ও স্বর্ণ ২০ ভরি মূল্য ৮০ হাজার, উপহার হিসেবে স্ত্রীর ৩০ ভরি স্বার্ণ দেখানো হয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মোট সম্পাদ দেখানো হয় ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬শত ৬১ টাকা। নিজের স্বর্ণ সেই আগের ২০ ভরি দেখানো হয়। একই সাথে স্ত্রীর স্বর্ণ ৩০ ভরি দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাংকে জমা ছিল ৯ লাখ টাকার জায়গাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এসে বেড়ে দাড়িয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭ শত ৪৯ টাকা। একই ভাবে নগদ অর্থের পরিমান একাদশে ১ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৬শত ৬১ টাকার বিপরীতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭শত ৪৯ টাকার হিসাব দেখানো হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত হলফনামা ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসকল তথ্য পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।