কোটচাঁদপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৮

আগের সংবাদ

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১১.৮

পরের সংবাদ

মণিরামপুরে প্লাস্টিকের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩ , ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩ , ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

 যশোরের মণিরামপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতের তৈরি কুঠিরশিল্প। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিকের কদর বাড়ায় বিলুপ্তির পথে প্রায় বাঁশ ও বেত শিল্প। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ ও বেতের স্থানটি প্লাস্টিক সামগ্রী দখল করে নিয়েছে।একসময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের হাজারো পণ্য সামগ্রী। যার মধ্যে ছিল কুলা, ধান রাখার জন্য বাঁশের চাটাই, হাঁস-মুরগি রাখার খাঁচা, বিভিন্ন ঢাকনা, চালনি,বসার মোড়া, বেতের ধামা, চেয়ার, টেবিল, দোলনা, ডালা, বেতের মাচা ইত্যাদি। অনেকে আবার এসব বাঁশ ও বেতের জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ছাড়াও অনেক দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই বাঁশ ও বেতের পণ্যসামগ্রী কিন্তু বর্তমানে মানুষ এসব পণ্য ব্যবহার না করায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প। সেইসঙ্গে বিপাকে পড়েছে এসব পণ্য বিক্রেতারা।

সরেজমিনে মণিরামপুর উপজেলার, ভোজগাতি, জামজামি, হাজরাইল, জালঝাড়া, মাঝিয়ালী, চাঁদপুর, লাউড়ি, পাড়ালা, নেহালপুর, গাংড়া, মহাদেবপুর, এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কিছু পরিবার এই বাঁশ আর বেত দিয়ে তৈরি শিল্পের মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন অনেকেই। তাছাড়াও প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর। বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় বাঁশ ও বেত শিল্পের চাহিদা আর
তেমন নেই।

মণিরাপুর ঝুড়িহাটায় বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য সামগ্রী বিক্রেতা মিন্টু দাস জানান, তিনি বাঁশ ও বেত দিয়ে ,খাঁচা,কুলা,মোড়া,ঝুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের কদর বাড়ায় এসব বাঁশ- বেতের জিনিস আর কেউ কিনতে চায় না। এখন সারাদিন যা বিক্রি হয় তাতে একশত টাকা থেকে দুইশত টাকার মত আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য বিক্রেতা বিনোধ দাস বলেন, আমার  হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হোগলা ডাঙ্গা গ্রামে আগে প্রায় ৩৫০ ঘর
এই বাঁশ-বেতের কাজ করে সংসার চালাত আর এখন ৩০/৪০ ঘর এই কাজ করে। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য মানুষ বেশি কেনে তাই আমাদের পণ্য আর কেউ কিনতে চায় না। এই কারণেই সবাই প্রায় তাদের বাপ- দাদার পেশা ছেড়ে দিয়েছে। তা ছাড়া বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব কুঠিরশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

মণিরামপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদ থেকে শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পগুলো বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাষ্টিক পন্য বাজার দখল করে নেওয়ায় বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর কমে গেছে। আর এসব পণ্য হারিয়ে গেলে একদিকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য অন্য দিকে বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজারো পরিবার। তাদের চাওয়া সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পেলে আবারও ফিরে আসতে পারবে নিজস্ব শিল্পে।বৃদ্ধি পাবে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের তৈরি হস্ত ও কুঠিরশিল্পের কাজ। এমনটাই সবার আশা বলে জানান। বি.এ. শফিদুর রহমান বলেন, বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের সামগ্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর পেছনের মানুষগুলোকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে তাদের পেশাকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজন হলে এদের বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় এসব সুন্দর বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাঁশ ও বেত শিল্পকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। তবে এই বেত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে দাবি করেন বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগররা।

ডিসেম্বর ১২:২০২৩ : at, ১১:০৮(GMT+06)আসিফ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়