আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতার সম্ভাবনার রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যার্থ হয়ে তারা সতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র কিনেছে। যদিও আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রতাহারের শেষ তারিখ এখনও বাকী। তারপরও প্রত্যেকেই যে যার মতো বিভিন্ন চায়ের দোকান, ভিন্ন ভিন্ন সভার নামে প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ৩৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৭ জনের মনোনয়নপত্র বিভিন্ন কারণে বাতিল বলে গণ্য হয়। সেক্ষেত্রে এখন ২৭ জনের প্রার্থীতা সঠিক বলে বিবেচিত হয়।
ঝিনাইদহ-১ আসনটি গঠিত শৈলকূপা উপজেলা নিয়ে। এখানে রয়েছে আওয়ামীলীগের নৌকার কান্ডারী হেভিওয়েট প্রার্থী ৪ বারের নির্বাচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই (এমপি)। তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম দুলাল। খুব স্বাভাবিকভাবেই উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, মূল প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হওয়া মাত্রই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী মুনিয়া আফরিন লড়ছেন একই আসনে। তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এবং তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে গণ্য হয়। এছাড়া জাতীয় পার্টির শৈলকূপা উপজেলা সভাপতি মনিকা আলম লড়ছেন। আরো রয়েছেন তৃণমুল বিএনপির কে এম জাহাঙ্গীর মাজমাদার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিছুর রহমান। তবে সবঠিকঠাক থাকলে আব্দুল হাইয়ের সাথে নজরুল ইসলাম দুলালের মূল ভোট যুদ্ধ হবে বলে ভোটারদের অভিমত। বর্তমানে এ আসন থেকে মোট ৬ জন প্রতীদ্বন্দীতা করছেন।
শৈলকুপার মোট ভোটার ৩ লা ৫ হাজর ৪৮২। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৪১৩ জন।
ঝিনাইদহ-২ আসনটি জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন। ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ড উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে হেভিওয়য়েট প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। ৩ জনই আওয়ামীলীগের। গত দুইবারের সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। তিনি ২০১৩ তে আনারস প্রতিক নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। এরপর দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ২০১৮ তে নির্বাচিত হন। এবার তিনি আবারো নৌকার কান্ডারী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সতন্ত্র দাড়িয়েছেন প্রতমবারের মতো দুই জন। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রেডিয়্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তবে ৩ জনই যদি দাড়িয়ে থাকেন তবে সামনের ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানায় এলাকার ভোটাররা। সংঘর্ষে ঘটনা ঘটার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে ভোটারদের আশংকা। সেই সাথে আরো ৭ জনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত ফজলুল কবির, বাংলাদেশ কংগ্রেস নাসির উদ্দিন, জাতীয় পার্টির মাহফুজুর রহমান, তৃণমুল বিএনপির জামিরুল ইসলাম, এনপিপির মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আব্দুল হান্নান খাঁ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সমর্থিক খোন্দকার হাফিজুর রহমান ফারুক।
ঝিনাইদহ-২ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৫। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ১৫১ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪০ জন, হিজড়া ৪ জন।
দুই উপজেলা মহেশপুর-কোটচাদপুর নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৩ আসনটি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তি উপজেলা মহেশপুর। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। দুই বারের সাংসদ শফিকুল আযম খান চঞ্চল এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তার সাথে বিগত দিনের সাংসদ নবী নেওয়াজকেও দল মনোনয়ন দেয়নি। তারা দুইজনই সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এবার। এই দুইজনকে বাদ দিয়ে দলের হাইকমান্ড প্রাধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহ উদ্দীন মিয়াজীকে নৌকা দিয়েছেন। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে মিয়াজী ও চঞ্চলের। আব্দুর রহমান জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টির বাবুল হোসেন, আনিছুর রহমান সতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৬৪১। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৫৯৬ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জন ও হিজড়া- ৩ জন।
জেলার মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ীক এলাকা হিসেবে ইতি মধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে কালীগঞ্জ উপজেলা। কারণ দক্ষিণে যশোর জেলা উত্তরে ঝিনাইদহ সদর, পূর্বে মাগুরা জেলার মাঝামিঝতে হওয়ায় এ উপজেলার গুরুত্ব অত্যন্ত। কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়েই ঝিনাইদহ ৪ আসনটি গঠিত। সেখানে হেভিওয়েট প্রার্থী ১ জনই তিনি ২ বারের নৌকার কান্ডারী সাংসদ আনারুল আজীম আনার। তিনি এবারও দলেরকাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয়ে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো নৌকার মনোনয়ন নিয়ে এসেছেন। বাকী ৪ জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন সতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকন, জাতীয় পার্টির এমদাদুল ইসলাম বাচ্চু, সতন্ত্র নজরুল ইসলাম, ও তৃণমুল বিএনপির নুর উদ্দিন আহম্মেদ।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭১৫। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৯ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৩ জন ও হিজড়া- ৩ জন।
ঝিনাইদহের ৪টি আসনে এবার ভোটকেন্দ্র থাকছে ৫৮৫টি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।