সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে অনুমোদনহীন এ,কে,এস ব্রিকসে দেদারসে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ । এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসন কে ম্যানেজ করেই অবৈধ ইট ভাটায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, ভাটা মালিক এস,এম, আবদুল কাদের ও তার মেনেজার সহাদেব। নিয়মনীতি না মেনে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। বসতির পাশে গড়ে উঠা এই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানবদেহে বাড়ছে নানা রকম রোগ ব্যাধি, বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। সরকারি বিধি নিষেধ সত্বেও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির ক্ষতি করে সংগ্রহ করা হচ্ছে ইট তৈরি করার মাটি। ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার নাম জিগজ্যাগ হলেও কয়লার বালাই নেই সেখানে। দীর্ঘদিন ধরে ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও সরজমিনে গেলে ভাটার কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ভাটা কতৃপক্ষ।
এলাকার বাবুল, গফুর, মামুন, জগদীশ টলী ড্রাইভার ইদ্রিস জানান, ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হলেই পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন কে ম্যানেজ করতে হয়। ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের মাধ্যমে সকলকে ম্যনেজ করতে দিতে হয় ভাটা প্রতি এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এরপরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের অত্যন্ত বিশ্বস্ত একাউন্টেন আবদুল ওয়াজেদ ও অফিস সহায়ক আবদুল আলীম কে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল ভাটার কার্যক্রম চালাতে হয়। সিজনের শুরুতেই মাঝেমধ্যে এই ভাটাতে আসতে দেখা যায়। যে কারণে অবৈধ এই ইট ভাটার কার্যক্রম বুক ফুলিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। গাছ কেটে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় একদিকে উজাড় হচ্ছে বন। তেমনি নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।বৈধ ইটভাটা মালিকরা বলেন, কয়লার দাম ও জ্বালানি তেল এর বৃদ্ধি হওয়ায়, কয়লা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এবং সব কিছুর খরচ বেড়েছে। এতে ইট উৎপাদন করতেও অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে, অথচ সেই তুলনায় ইট বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছি না। কারণ অবৈধ ইটভাটা মালিকরা তাদের ইচ্ছে মতো সরকারি নিয়মনীতি না মেনে খড়ি, লাকড়ি ব্যবহার করে ও কোন রকমের লাইসেন্স না করেই ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তারা স্বল্পমূল্যে ইট উৎপাদন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আমরা ব্যয়বহুল খরচ করে ইট উৎপাদন করেও সঠিক দামে বিক্রয় করতে পারছি না। এ বিষয়ে মেসার্স এ,কে,এস ব্রিকসের মেনেজার বলেন, আমরা কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর জন্য কিছুটা কমে ইট বিক্রি করতে পারি। কিছু করার নাই, ব্যবসা এখন প্রতিযোগিতার হয়ে গেছে।
কয়লার দাম বেশি হওয়ায় কাঠ দিয়েই ইট পোড়াতে হচ্ছে। এদিকে অনুমোদনহীন এসব ইটভাটার কারণে কৃষি সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা জেলায় লিচু, আম ও ধানের ফলন কমতে শুরু করছে ৷ তাই মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টির আগেই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
তারা আরও বলেন, কৃষি জমির উপরের মাটি কেটে নিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ২০/৩০ বছর সময় লেগে যায়। স্কুল কলেজ বসতবাড়ীর এক কিলামিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছে না এই মেসার্স এ,কে,এস ব্রিকস কতৃপক্ষ। ফলে ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় দেখা দেয় নানা রোগ ব্যাধি। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে র্দীঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।এদিকে অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের কিছু দুর্নিতি বাজ কর্মকর্তা কে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে এসব অবৈধ ইট ভাটা। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদী, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ও মানুষের বসতির ক্ষতি করেই চলছে অবৈধ ইট ভাটাগুলো। এসব ভাটাতে পরিবেশ, ফায়ার, ট্রেড, বিএসটিআইসহ কোন ছাড়পত্র নাই, কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করেই ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপ পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান বড়দলে ৪ টি ভাটার একটিরও অনুমোদন নেই। গতবছরে অনুমোদনহীন ভাটাগুলি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এবারও যদি তারা কার্যক্রম শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,অবৈধ এসব ইট ভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।