বিলুপ্তির পথে শার্শার খেজুর গাছ ও গাছিরা
গাছি সংকটের কারণে যশোর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস। বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এ রসের স্বাদ। এখন খেজুর গাছ থাকলেও গাছির অভাব। যশোরে যেমন কমছে খেজুর গাছ, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গাছি সম্প্রদায়ের লোক। এক সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। জেলা-উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। তখন প্রতিটি গ্রামে গড়ে ৮ থেকে ১০ জন পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। এখন আর সেদিন নেই। গাছিদের পেশা বদল, নতুন করে এ পেশায় (গাছি) কেউ না আসার কারণে একেবারেই যেন যশোর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। বর্তমানে প্রতি গ্রাম তো দূরে থাক কয়েক গ্রাম খুঁজলেও পেশাদার একজন গাছির সন্ধান মিলবে না। ৯০ দশকের শুরু থেকে যশোরে খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়। ফলে খেজুর গাছ থেকে রস বের করা বেশিরভাগ গাছি গাছ কাটা মৌসুমে কাজ না পেয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। যেসব গাছ অবশিষ্ট আছে সেগুলো এখন গাছির অভাবে পড়ে রয়েছে।
শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেসব খেজুর গাছের বাগান ছিল এখন আর তা অবশিষ্ট নেই। খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। নতুন করে এখন আর কেউ বাগান করছে না। মাঠে কিম্বা রাস্তার ধারে যা আছে তার বেশিরভাগ পড়ে আছে। অল্প কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ কাঁটা হয়েছে। অনেকে বলছেন, আগে শীত এলে গ্রামে গ্রামে খেজুরের রসে ভিজানো রসের পিঠা খাওয়ার যে ধুম পড়ত তা এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।
বাগআঁচড়া পিঁপড়াগাছি গ্রামের সুমন বলেন, খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাটায়।সেখানে খেজুর গাছ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এদিকে খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এই গাছ তোলার (কাটার) কাজে নিয়োজিত গাছিরা চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাবে এই খেজুরের রস।
উপজেলার জামতলার গাছি আব্দুস সাত্তার (৬৫) বলেন, আগে শীতকালে কয়েক পণ করে গাছ কাটিছি। অনেক রস পাতাম। রস বাজারে বিক্রি করতাম। জ্বালিয়ে গুড় বানাতাম। গুড় পাটালি বাজারে বিক্রি করতাম। শীত আসলিই বেশ টাকা আয় করতাম। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই দিন কাটত। কিন্তু এখন এলাকায় তেমন একটা খেজুর গাছ নেই। এখন যা আছে তা মালিকরা নিজেদের জন্য কাটাচ্ছে। ফলে এই পেশার মানুষ দিন দিন কাজ হারাচ্ছে। তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
সামটা গ্রামের প্রবীণ গাছি উজির আলি (৭০) বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস বের করছেন। কিন্তু আগের মতো এলাকায় খেজুর গাছ নেই। আর খেজুর গাছ কেটে এখন পেট চলে না। বয়স হয়েছে, তাই গাছির পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন এই গরু চরায় খায়।
সামটা গ্রামের গাছি মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর রস বিক্রি করবো ২০০টাকা (ঠিলে) ভাড়, গুড় ২৫০-৩০০ টাকা কেজি, পাটালী ৩০০ টাকা কেজি।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, দিন দিন ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। গাছির সংখ্যাও একেবারে কমে গেছে। খেজুর গাছ কেটে রস বের করা একটা শিল্প। কিন্তু সেই শৈল্পিক পেশাদার গাছি এখন তো চোখেই পড়ে না। পুরো উপজেলায় ৪৬০ জন গাছি টিকে আছেন। উপজেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ৫১হাজার ৬৫৩টি। এরমধ্যে মোট ফলন্ত (রস দেওয়া) গাছের সংখ্যা ৪২ হাজার ৯৬৪টি গাছে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং যারা গাছি আছেন তারা কিন্তু ইতি মধ্যে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। আমরা বিভিন্ন সময় দেখি বিভিন্ন কারনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে থাকে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্দ্যেগে সেই খেজুর গাছকে বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।