রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মৎস্য খাতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার দাবি
খরা, অতিবৃষ্টির পর অবরোধের চাপে নাকাল হয়ে পড়েছেন যশোরের রেণু পোনা চাষীরা। বিকিকিনি নেমেছে অর্ধেকেরও নীচে। এতে পুরো মৌসুম জুড়েই লোকসান গুণতে হচ্ছে রেণু পোনার রাজধানীখ্যাত চাঁচড়ার মাছ চাষীদের। মৌসুমের শুরুতেই খরার কবলে পড়েন চাঁচড়ার রেণু পোনা মাছ চাষীরা। এতে পোনার উৎপাদন মারাত্নকভাবে ব্যহত হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল জুড়ে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়ায় বেশীরভাগ হ্যাচারির মাছই মারা যায়।
টানা অনাবৃষ্টির পর মৌসুমের শেষে দেখা দেয় অতিবৃষ্টি। এসময়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দেয়ায় আর্শীবাদের বৃষ্টি পরিণত হয় অভিশাপে। কমে যায় বিকিকিনি। সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই অবরোধের কবলে পড়ে শেষ আশাটুকুও হারিয়েছেন চাষীরা। তারওপর খাবারের মূল্য, সেচ, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন যশোরের পোনা চাষীরা।
সরেজমিনে গিয়ে রেণু পোনার রাজধানীখ্যাত চাঁচড়ার মাছ চাষীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এখন চলছে হরতাল অবরোধ। এর আগে ছিলো বৃষ্টি। তার আগে খরা। তখন খরার কারণে মাছ বিক্রি করতে পারিনি। পরে বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়ায় মাছ বিক্রি হয়নি। আর এখন হরতাল অবরোধের কারণে মানুষজন মাছ কিনতে আসতে পারছেন না। খাবারের যে পরিমাণ দাম বাড়ছে, সে হিসেবে আমরা মাছ বিক্রি করতে পারছি না। এটা আমাদের সারা দেশের মোকাম। এখান থেকেই বেশীরভাগ মাছ যায়। হরতাল, অবরোধে আমাদের বেচাকেনা নেই। এখানে যদি সারা দেশ থেকে মানুষ না আসতে পারে, তাহলেতো আমাদের কেনাবেচা হবে না। বাহিরে থেকে কাস্টমার আসতে না পারায় আমাদের বেচাকেনা কমে গেছে। এতে মাছের রেট অর্ধেকে নেমে এসেছে। যে টাকা আমাদের খরচ, সেই দামেও এখন আমরা মাছ বেঁচতে পারছি না। যেহেতু কাঁচামাল, আমাদের কম হলেও বেঁচতে হবে। যেকারণে এখন লস করে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার ৪টা পুকুর আছে। একটা লিজ দেই, আর ৩টা আমি নিজে চালাই। এই অবরোধ এসে আমার খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। সিজনের সময় আমাদের এক, দেড় কোটি টাকার বিক্রি হয়, কিন্তু এখন তা ২০-৩০ লাখ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন আমরা এমন দুরাবস্থায় পড়েছি যে, মাছের খাদ্য দেয়ার টাকাও আমাদের কাছে নেই। একদিনে মাছ বিক্রি হয়ে যাবে, কিন্তু সেখানে লাগছে ১০ দিন। এতে আমাদের অনেক ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে।
বৈরী আবহাওয়া আর অবরোধের কারণে চলতি বছর বিকিকিনি নেমেছে অর্ধেকেরও নীচে। লাভতো দূরের কথা, আসল ঘরে তুলতেই চাষীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের।
যশোরের চাঁচড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি মি. কাজী তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রথমে হলো খরা। তারপর টানা বৃষ্টি। তা না কাটতে কাটতেই আবার অবরোধ। এতে আমাদের বেঁচাকেনা অনেক কমে গেছে। তারওপরে খাদ্যের দাম বেশী। আগে যেখানে ৪শ’, ৫শ’ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হত। এই খরা, বৃষ্টি আর অবরোধের কারণে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ কোটি টাকায়। যদি এভাবে কেনাবেঁচা হতে থাকে, তাহলে আমাদের এই মাছ ব্যবসাটা ধ্বংস হয়ে যাবে।
হরতাল-অবরোধের কারণে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা দেশের মৎস্য খাতের জন্য অশনী সংকেত।
যশোর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মি. রিপন কুমার ঘোষ বলেন, যশোরে এক মৌসুমে প্রায় ৩৩৪.৫ কোটি পোনা উৎপাদন হয়। এই পোনা যশোরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এজন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। মাছ একটা জীবন্ত প্রাণী। পোনা কিন্তু জীবন্ত প্রাণী হিসেবেই পরিবহন করতে হয়। মাছ যদি মারা যায়, এটা কিন্তু ইট, কাঠ, পাথরের মত কাজ হয়না। এই বিষয়টি চিন্তাভাবনায় এনে অবরোধকারীরা যদি তাদের কর্মসূচি দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি যারা এর সুফলভোগী তারা যদি তাদের পরিবহনের গায়ে কোন স্টিকার, পোস্টার কিম্বা ব্যানার টানিয়ে দেন, তাহলে কিছুটা হলেও তারা অবরোধের আওতার বাহিরে থাকবেন। একইসাথে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচিতে মৎস্য খাতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন, তাহলে সংকট উত্তরণ সম্ভব।
যশোরে প্রায় ৫ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন রেনু পোনা উৎপাদন হয়। যার গড় বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এখানকার লক্ষাধিক মানুষ রেণু পোনা উৎপাদন ও বিপননেন সাথে জড়িত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।