নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য পদে আ. লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন শ্যামল দাশ টিটু

আগের সংবাদ

নড়াইল-১ আসনে নৌকার মাঝি হতে চান চৈতী বিশ্বাস

পরের সংবাদ

“সোনার ছেলে” ভিক্ষা দাও

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১০:৪২ অপরাহ্ণ আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১০:৪৯ অপরাহ্ণ

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলায় বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে হারিয়েছে। এই খেলায় বাংলাদেশের জয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোচনা হচ্ছে সাকিব আল হাসান আর এঞ্জেল ম্যাথিউয়ের মধ্যে টাইমড আউট নিয়ে বিতর্ক। সাকিব আল হাসান সবকিছু নিয়ম মেনে করেছেন। ওদিকে ইচ্ছা করলে এই আউট না নিয়ে খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব দেখানো যেতো এই ধরনের বিতর্ক চলছে।

ম্যাচের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের মুখপাত্র ম্যাচের আম্পায়ার এড্রিয়ান হোল্ডস্টক বলেছেন, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ দুই মিনিটের মধ্যে আসেননি ক্রিজে। টাইমড আউট ডিসমিস্যাল’ ক্রিকেটের আইন সিদ্ধ একটি আউটের ধরন, কিন্তু যা ১৪৬ বছরেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত হয়নি।এ কারণেই প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর ব্যবহার দেখে বিষয়টি নিয়ে চলছে তুমুল শোরগোল – আলোচনা যেমন আছে, তেমনি আছে সমালোচনাও।

সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে অনেকে মতামত দিচ্ছেন তবে অনেকেই আবার বলছেন সাকিব ঠিক কাজটাই করেছেন।

পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব আখতার বলছেন, “এটা খেলাটার স্পিরিটের বিরুদ্ধে গেল। আমি জানি এটা আইনে আছে, কিন্তু এর আগে যেহেতু কেউ আপিল করেনি, সাকিবও এড়িয়ে গেলেই পারতেন।”

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফও বিষয়টিকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজহার আলী স্পোর্টসম্যানশিপের দিক থেকে এই ঘটনাটিকে খারাপ উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেছেন, “এখানে ম্যাথুজ আরেকটু চৌকস হতেই পারতেন। সাকিব একজন স্পিনার, তার বলে হেলমেটের প্রয়োজন হয় না। তিনি প্রথম বলটা খেলে দিতে পারতেন, এরপর বলতে পারতেন আমার হেলমেটের ফিতাটা ছিড়ে গেছে। ”মাইকেল ভন মনে করেন, “সাকিব পুরোপুরি নিজের অধিকারের মধ্যে থেকেই আপিল করেছেন।”

জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) গোটা ঘটনা নিয়ে একটা বিশদ লেখা লিখেছেন, যার সারমর্ম হচ্ছে আম্পায়াররা বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ।তারা জেনে বুঝেই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সাকিবও তার অধিকারের পূর্ণ চর্চা করেছেন।

সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে আমি যুদ্ধে ছিলাম, আমার যেটাই করার দরকার ছিল, সেটা করেছি। সাকিব আরো বলেন ক্রিকেটীয় স্পিরিট নষ্ট হলে আইসিসি উচিৎ এই নিয়মকে তুলে দেয়া।

তবুও ঝড় উঠেছে ক্রিকেটের সৌন্দর্য নষ্টের। এভাবেই চলছে আমাদের প্রতিটি স্তরে সভ্যতার ক্রমবিকাশের লড়াই।

আপনি প্রচুর অর্থের মালিক হতে চান তাহলে আপনার মূল্যবোধ ধনবান হওয়ার সাথে মিল রেখে চলতে হবে। কারণ মূল্যবোধ আপনার জীবনের প্রতিটি দিক কে পরিচালিত করে। ভিশন হচ্ছে আপনার জীবন উদ্দেশ্যের একটি পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি। এ আপনার মৃত্যুর পর লিগাসি এবং জীবিত কালের একটি দলিল।

এ দলিলে লিপিবদ্ধ হয় আপনার মূল্যবোধ ও এগিয়ে চলার শক্তি। মানুষের বহুবিধ চরিত্র। কেউ তাকিয়ে থাকে আকাশ পানে, কেউবা আছে ধুলার ধরায়। কেউ বা তার ভিশন সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিষ্কার, কিন্তু জানে না কিভাবে সব সামলে অর্থ আগমনকে সুনিশ্চিত করা যায়। আবার কেউ কেউ সারা জীবন কাজ করেও লক্ষীকে মুঠোয় ধরতে ব্যর্থ হয়।

জীবনের মূল্যবোধ আপনার জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিচালনায় পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করে। এই মূল্যবোধ আপনার চিন্তা, সিদ্ধান্ত ও কাজকে পরিশোধিত করে। আপনি পৃথিবী দেখেন আপনার মূল্যবোধ অনুযায়ী। চলছে দ্বন্দ্ব- অর্থ বড় নাকি মানবিক মূল্যবোধ। মনের জানালায় প্রশ্ন ঘুরপাক- আমরা দিনের পর দিন আমাদের নৈতিকতা এবং নৈতিক মানদণ্ড হারাচ্ছি কিনা?প্রায় প্রতিদিনই নানান রকম নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারনার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ নিজেদেরকে সর্বদাই কাজের মধ্যে ব্যস্ত করে তুলছে এবং প্রতিনিয়ত তারা টাকার পিছনে ছুটছে। যার কারণে মানুষের জীবনযাপন ও মন মানসিকতা দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে।

কাঙ্খিত উন্নত বিশ্বের দেশ জাপানীজরা -কোরিয়ানরা তাদের সঙ্গী হিসেবে মানুষের থেকে রোবটের উপর নির্ভর করতে বেশি পছন্দ করে, পশ্চিমা দেশগুলোর ধনী লোকেরা এখন মানুষের চেয়ে সঙ্গী হিসেবে কুকুর এবং পোষা প্রাণীকে পছন্দ করে। এর কিছু চিহ্ন আমাদের সমাজেও দেখা যাচ্ছে।এ থেকে বোঝা যায় যে প্রতিনিয়ত মানুষের প্রতি মানুষের মূল্য কিভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল একবার সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ট্যাক্সিতে করে বিবিসি অফিসে যাচ্ছিলেন। ট্যাক্সিচালক চার্চিলকে চিনতো না।

ট্যাক্সি থেকে নামতে নামতে চার্চিল চালককে বললেন, ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমার আসতে চল্লিশ মিনিট লাগতে পারে।’ চার্চিলের কথা শুনে ড্রাইভার বলল, ‘সম্ভব না স্যার, কারণ আমাকে রেডিওতে উইনস্টন চার্চিলের বক্তব্য শোনার জন্য বাড়ি যেতে হবে।’ ড্রাইভারের কথা শুনে চার্চিল মনে মনে খুব খুশি হলেন এবং দশ পাউন্ড দিলেন ড্রাইভারকে যা তখনকার সময়ের অনেক টাকা। টাকা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে ড্রাইভার বলল, ‘স্যার, আপনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করব। গোল্লায় যাক চার্চিল। চার্চিল পরে এই ঘটনার উল্লেখ করে বলেছিলেন, আমি সেদিন টের পেয়েছিলাম, মানুষের যত আদর্শ, নীতি নৈতিকতা টাকার কাছে কত তুচ্ছ!
আপনি দেখতে পারেন কিভাবে টাকার বিপরীতে নীতিগুলি পরিবর্তন করা হয়, অর্থের বিনিময়ে দেশ বিক্রি হয়, অর্থের জন্য সম্মান বিক্রি হয়, অর্থের জন্য পরিবার বিভক্ত হয়, অর্থের জন্য বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়, টাকার জন্য মানুষ হত্যা এবং লোককে অর্থের দাস করা হচ্ছে। আমরা কি টাকা ছাড়া বাঁচতে পারি?
বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য স্বার্থত্যাগকারী মানুষের সন্ধান করেছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে আকুল কণ্ঠে বলেছেন- ‘কর্মীরা, তোমাদের কাছে আমার দাবি আছে। তোমরা জীবনে আমার চোখের সামনে কোনো দিন কথা বলো নাই। যা বলেছি, তোমরা তা-ই করেছ। তোমরা হাসতে হাসতে মৃত্যু মুখে দাঁড়িয়েছ।

তোমরা পারবা না আমার কথা শুনতে? দুর্নীতি আমরা দেখব না, দুর্নীতি আমরা করব না, দুর্নীতি এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব। তোমরা পারবা না এ দেশের মানুষকে ভালোবাসবার? আমরা দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করব। এ দেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে চায়, আমরা শান্তি দেব। পারবা না তোমরা এ কাজ করতে? বলো, আমার কাছে। না পারো আমাকে বিদায় করে দাও। আমি কিছু চাই না তোমাদের কাছে।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গ করার জন্য ভারতবাসীর কাছে ‘সোনার ছেলে’ ‘ভিক্ষা’ চেয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন- ‘ভিক্ষা দাও! পুরবাসী ভিক্ষা দাও! তোমাদের একটি সোনার ছেলে ভিক্ষা দাও! আমাদের এমন একটি ছেলে দাও, যে বলবে আমি ঘরের নই আমি পরের। আমি আমার নই, আমি দেশের।’ এরপর তিনি তরুণদের আহ্বান করে বলেন : ‘এসো! কে আছ তরুণ, কে আছ পাগল ভিক্ষা দাও, তোমার মাতাল প্রাণটি ভিক্ষা দাও।’ এই ‘প্রাণদান’ মানে দেশের মানুষের স্বার্থে জীবন সমর্পণ। বঙ্গবন্ধুও সোনার বাংলা গড়তে আসলে এমন ‘প্রাণদানকারী’ খুঁজেছেন। আজ বাংলাদেশের যে দৃশ্যমান অগ্রগতি—তা থেকে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সামনের দিন গুলো কি মানবিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের পালা? এটা সবচেয়ে কঠিন সংগ্রাম। এই সংগ্রাম করতে হবে নিজের সঙ্গে নিজের। কারণ ‘সোনার মানুষ’ গড়ার প্রক্রিয়াটি শুধুই সামষ্টিক নয়।

ব্যক্তিগতভাবেও এ প্রক্রিয়ার সূচনা করা এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই যদি পাল্টে যাই, বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। আমরা প্রত্যেকেই যদি সোনার মানুষে পরিণত হই, বাংলাদেশ হয়ে যাবে সোনার বাংলা।

লেখক-
সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, যশোর জেলা শাখা।
সহ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, যশোর।
সহ সভাপতি, উদীচী, যশোর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়