কবে উদ্বোধন বলতে পারছেন না কেউ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় অযত্নে আর অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে একটি আধুনিকমানের মিলনায়তন। উদ্বোধন না হওয়ার কারণে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে মিলনায়তনটির গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। কবে নাগাদ এর উদ্বোধন হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। উপজেলা প্রকৌশলীর ‘ব্যর্থতার’ কারণে এই অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস ভবনটি উদ্বোধন করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অনেকে মনে করছেন।
জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা দৌলতপুরে এমনিতেই মিলনায়তন সংকট বহুদিনের। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছোট পরিসরের দুটি মিলনায়তন থাকলেও এর মধ্যে বহু বছরের পুরনো ‘শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন’ ভঙ্গুর হওয়ায় বর্তমানে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনটিও পুরনো হওয়ায় বছর বছর সংস্কার করে কোনোমতে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। যার আসন সংখ্যা অপর্যাপ্ত এবং মান্ধাতাধাঁচের। উপজেলা পরিষদের এই পুরনো মিলনায়তনটিতে মাঝেমধ্যেই ওপরের কিছু সিলিং খুলে পড়ে, বেশকিছু লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি অচল হয়ে যায় ফ্যানও। ফলে ছোট পরিসরের মিটিংগুলো মোটামুটি উন্নত উপজেলা কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বিশাল আয়োতনের এ উপজেলায় মিলনায়তন সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় এনে এখানে একটি আধুনিকমানের মিলনায়তন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই মোতাবেক ২০১৮ সালের জুন মাসে শুরু হয় ৫০০ আসনের আধুনিক অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস ভবনের নির্মাণ কাজ। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। যার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুন মাসে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ করিয়ে উদ্বোধনের জন্য হস্তান্তর করাতে পারেনি উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। যদিও ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী রাকিব হোসেন গত বছরের নভেম্বর থেকে এখানকার দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু এই এক বছরে একটিবারও নবনির্মিত আধুনিক মিলনায়তনের তালা খোলেননি তিনি, এমন বক্তব্য তার নিজের। উপজেলা প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারেনি। আমাদের এখনো সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে, কিছু সংশোধন আছে। এ অবস্থায়ও উদ্বোধন করে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। তবে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয়নি উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদ। সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্নের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। কবে পুরো কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধন হতে পারে সেটিও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী শামীম আহম্মেদ বলেছেন উল্টো কথা। তাকে মিলনায়তন ভবন হস্তান্তরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ইতোমধ্যে ভবনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে। এ সময় তিনি ‘ব্যস্ত আছি পরে কথা বলছি’ বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। তবে পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ বড় জায়গাজুড়ে এই আধুনিক মিলনায়তন ভবনটি দৃষ্টিনন্দনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখানে শব্দযন্ত্র, চেয়ার, মঞ্চসহ সবই দারুণ সুসজ্জিত। কিন্তু কাঠের কারুকাজে স্যাঁতাপড়া দাগ পড়েছে। ভবনের ভেতরে ব্যবহার করা সোফা ও চেয়ারের চামড়ার কভারে ছত্রাক জমতে শুরু করেছে। ফ্লোরে ধুলাবালুর আস্তরণ জমেছে। নষ্ট হতে শুরু করেছে দেয়ালের রঙও। প্রস্তুত ভবনটির বাইরে দক্ষিণ গেটের দিকে সামান্য কিছু অংশ এখনো অসম্পন্ন রয়েছে। অনেকে মিলনায়তন ভবনটি দেখার জন্য আসছেন, মোবাইলে ছবি তুলছেন।
স্থানীয়রা জানান, এই আধুনিক বিল্ডিংটির সব কাজ এখন রেডি, দীর্ঘ দিনেও কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে থেকে এখানকার জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ভেতরে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওবায়দুল্লাহ বলেন, অডিটোরিয়ামটি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ আমাদের কাছে হস্তান্তর করলেই আমরা উদ্বোধন ও বাকি কার্যক্রম শুরু করব। তারা এখনো হস্তান্তর করেনি। তারা কবে এটি হস্তান্তর করবেন তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। এ কারণে এখনই উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশল বিভাগের ঠেলাঠেলির কারণে এই আধুনিক মিলনায়তনটি কবে হস্তান্তর হবে, আর কবেই বা উদ্বোধন করা হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই। এখানে মিলনায়তন সংকট থাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে নানা সমস্যা হওয়ার কারণে বড় পরিসরের নতুন মিলনায়তনটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এটি চালু হতে আর কতদিন লাগবে- এই প্রশ্ন উপজেলাবাসীর।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।