‘জোড়াসাঁকো থেকে শিলাইদহ’ গঙ্গা-পদ্মা সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রমের অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেলের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত সাবেক বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মীদের সাথে যশোরের সাংস্কৃতিককর্মীদের দুই বাংলার সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে নানামুখী আলোচনা হয়। মতবিনিময় সভার যৌথ আয়োজন করে বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও সম্প্রীতি বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশকে সারা বিশ্বের মধ্যে একটি সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে যারা পাক হানাদার বাহিনী সাথে একত্রিত হয়ে এ দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিল তারা আবারও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সমানে রেখে গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছে। সাংস্কৃতিক শক্তির লড়াই দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করবো।
ভারত ও বাংলাদেশের সম্প্রীতির বিষয়ে বক্তারা বলেন, ভারতে সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুসুলভ। দুই দেশের সরকার যথাযথ ভুমিকা রাখলে দুই বাংলার সম্প্রীতির বন্ধন কখনোই নষ্ট হবে না। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্ত প্রতিনিয়ত বিনা বিচারে যে মানুষ হত্যা হয় এটি পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা গেলে সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, দুই দেশের সরকারকে সম্প্রীতি রক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে। সম্প্রীতি নষ্ট করার মূল কারণ হলো মৌলবাদী। বর্তমান সমাজকে আমরা এই মৌলবাদীদের থেকে যত দূরে রাখতে পারবো ততই আমাদের বাঙালী সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি বন্ধন নিরাপদ থাকবে। এ বন্ধনে যত প্রতিবন্ধকতা আসবে আমাদের আপমর জনতার শক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তারা আরও বলেন, দেশ ভাগ হলেও আমাদের চেতনা ভাগ হয়নি। আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বের উন্নত সংস্কৃতিগুলোর অন্যতম। দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক আরোও বৃদ্ধি করতে দুই দেশের সরকার প্রধানদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে হত্যা, সীমান্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে। এসময় ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা এবং উন্নয়ন যাত্রায় ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বাংলাদেশের বক্তরা। দুই দেশের সংবাদকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলেন তারা। এসময় এক পক্ষ অপর পক্ষকে তাদের দেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। দুই বাংলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শীর্ষ ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত মতবিনিময় করেন।সবশেষে দুই বাংলার বাঙালীদের আন্তরিকতা, যোগাযোগ ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বন্ধন রক্ষায় দুই দেশের মানুষের সহোযোগিতা কামনা করেন বক্তারা।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলী, ভারতীয় এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি চামেলী গাঙ্গুলী, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অশোক ঠাকুর, কোলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সম্প্রীতি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. আল মাহমুদ মাহতাব স্বপ্নিল, সম্প্রীতি বাংলাদেশ যশোর জেলা শাখার আহবায়ক দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলান মবিন, সদস্য সচিব দেবাশীষ মিশ্র জয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যশোর শাখার সভাপতি হারুন অর রশিদ, যশোর পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপংকর দাস রতন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু প্রমুখ।
এ সময় আগত অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সাবেক চিফ রিপোর্টার ড. দেবদুত ঘোষ ঠাকুর, বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের কনভেনর শ্রী সৌম্যব্রত দাস, কোঅর্ডিনেটর শ্রীমতি অর্পিতা কাঞ্জিলাল, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট শ্রী দিপঙ্কর কাঞ্জিজলাল, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত শোভন রায়, সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্বেবিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক সোমা সুরসহ কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠকবৃন্দ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।