কুবিতে এক কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ

আগের সংবাদ

গ্রীন ভয়েস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে

পরের সংবাদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সবকিছু হোক সংঘাতমুক্ত, শান্তিপূর্ণ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ৭:৩১ অপরাহ্ণ আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ৮:১২ অপরাহ্ণ

ঠিক এক বছর এক মাস আগে (১৫ অক্টোবর ২০২২) দৈনিক কালবেলার উদ্বোধন সংখ্যায় প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল, ‘চব্বিশের ৪ জানুয়ারি ভোট’। যদিও সেই খবর থেকে দুইদিন পিছিয়ে প্রায় কাছাকাছি সময়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই (৭ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘চোখ রাঙানি’ উপেক্ষা করে গত ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পর্দার আড়ালে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় নিয়ে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে নাকি ব্যাপক সংঘাতের পথেই এগোবে দেশ- এ রকমের প্রশ্ন এখন সচেতন মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ঘটনাবহুল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই টানা চতুর্থবার সরকার প্রধান হবেন, এটা খুব সহজ হিসাব। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে। যদিও তফসিল ঘোষণা মানেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যাওয়া, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিষয়টি এত সহজ করে দেখার সুযোগ থাকে না। মাঝপথে গিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে হয়তো এই নির্বাচন আটকেও যেতে পারে। আর যদি তাই হয় তাতে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না। কারণ, অতীতেও এমন ঘটনার রেকর্ড অাছে। যদিও এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি বদলাতেও সময় লাগে না। ঘটনা পরম্পরায় অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সিইসির ঘোষিত তফসিল তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করে এর প্রতিবাদে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে। এদিকে বিএনপির বর্তমান অভিভাবক হিসাবে এক পক্ষের কাছে অাখ্যায়িত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ‘অবকাশ যাপনে’ কলম্বোর উদ্দেশে বৃহস্পতিবার দেশ ত্যাগ করেছেন। তফসিল ঘোষণার পরের দিনেই হঠাৎ মার্কিন দূতের দেশ ছাড়ার বিষয়টি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। পিটার হাস শ্রীলঙ্কার কলম্বো হয়ে আমেরিকা যাবেন বলে অনেকে ধারণা করলেও কবে নাগাদ ঢাকায় ফিরবেন সেটা জানাতে পারছে না কোনো গণমাধ্যম।

বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ জোটভুক্ত ১৫টি দল তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপিসহ ১৭টি দল তফসিলের বিরোধীতা করে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। আর অপরাপর ১২টি দল তফসিলের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, নীরব ভূমিকায় রয়েছে। এখানে ছোট দলগুলোকে আলোচনার বাইরে রাখছি। বিএনপির মতো একটি ‘সন্ত্রাসী’ দল নির্বাচনে না এলে তাতে কী আসে যায়। হোক সেই দলটি নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। তাতেও সমস্যা নাই! যা কিছুই হোক পরে দেখা যাবে, তার অাগে যারা আসবে তাদের নিয়েই নির্বাচনটি সেরে ফেলতে হবে- অনেকটা এ রকম মনোভাব নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে এগোচ্ছে বলে সুস্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

টানা ১৫ বছর ধরে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ সঙ্গত কারণে সব দিক থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন এই দলটির কী পরিমাণ জনসমর্থন আছে সেটা এখন আর বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা সিডিউল মোতাবেক নির্বাচন করতে পারবে তো? ক্ষমতার মসনদে থেকে আওয়ামী লীগ দিনকে দিন প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দলটির বিশাল কর্মী বাহিনী ছাড়াও সঙ্গে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগানো হবে। ফলে হয়তো তারা যথাসময়ে নির্বাচন করে ফেলবে। ক্ষমতাসীনদের দাবি, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ তাদের ভোট দিতে চায়। সুতরাং নির্বাচনে জয়ী হতে আর কোনো চিন্তা নাই!

সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোয় লিখেছেন, ‘আগের দুটি নির্বাচনে আমাদের দেশের ভোটারদের একটা বড় অংশ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে তারা সন্দিহান। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণা হওয়ায় পুরো বিষয়টিই আরো জটিল করে দিয়েছে। তফসিলের পর নির্বাচন কমিশনের যে নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা, সেটা তারা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে, সেটা কারো কাছেই বোধগম্য নয়। মূল বিষয় হলো একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করার পরিবেশ তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে যে নির্বাচনটি হবে সেটা শুধু দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে আসার ফলে সরকার চরম বেকায়দায় পড়লেও তা নিয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্তে এসেছে। আবার এতে ‘তলে তলে’ মিত্রদেশের পরামর্শও থাকতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না শেখ হাসিনার সরকার। অন্যদিকে গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অনড় অবস্থান নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি অনেকখানি স্বস্তির জায়গা ফিরে পায়। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিএনপির প্রায় সবকিছু ‘লণ্ডভণ্ড’ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির একার পক্ষে আন্দোলন জমিয়ে তোলা বেশ কঠিন। অন্যান্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গণআন্দোলন গড়ে না উঠলে কিংবা গণঅভ্যুত্থান ঘটানো না গেলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন তো বহুদূরের কথা তাদের একটি পশমও ছেঁড়া সম্ভব নয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের সংকটে পড়বে দেশ, এটা সবার কাছেই মোটামুটি পরিষ্কার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনের আগে বড় পরিসরে মার্কিন ভিসানীতি কার্যকরের পদক্ষেপ এমনকি বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন না এবং নির্বাচন থেকে একটুও পিছু হটবেন না। টানা চার মেয়াদে সরকারে থাকার লক্ষ্য নিয়ে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে পুরোপুরি হার্ডলাইনে রয়েছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা করণীয় তিনি সবই করবেন। যদিও আগের মতো কোনোভাবেই এই নির্বাচন মসৃণ হবে না, এ জন্য শেখ হাসিনাকে অনেক বেশি পরিমাণে কাঠখড় পোড়াতে হবে। এই মুহূর্তে ক্ষমতা ধরে রাখাটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উতরে যেতে তিনি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

যে কোনো উপায়েই হোক নির্বাচনী বৈতরণী পেরোনোর পর পরিস্থিতি বুঝে যা যা করা দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক তাই করবেন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জনআকাঙ্ক্ষা আরো প্রবল হয়ে উঠলে এবং নানামুখী বিদেশি চাপে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়লে অর্থাৎ পুরো পরিস্থিতি অনুকূলের বাইরে চলে গেলে তবুও প্রধানমন্ত্রী সামলে নেয়ার প্রাণপন চেষ্টা করবেন। সরকারে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরেও ঘটনাক্রমে একেবারেই বেসামাল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে প্রয়োজনে তখন হয়তো শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসলেও আসতে পারেন। তবে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যদিও একজন বয়স্ক সরকারপ্রধানের পক্ষে এতগুলো প্রতিকূল পরিস্থিতি কিংবা এতবেশি চাপ মাথায় নিয়ে এত লম্বা সময় ধরে দেশ পরিচালনা করা চাট্টিখানি কথা নয়, যা তিনি করে দেখিয়েছেন। কিন্তু আর কত? তবে আচমকা কঠিন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে সেক্ষেত্রে দ্বাদশের পূর্ণ মেয়াদে তার পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা হয়তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আবার অত্যন্ত দৃঢ় মনোভাবের কারণে পূর্ণ মেয়াদেও রয়ে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবেশ পরিস্থিতিই বলে দেবে দুটোর মধ্যে আসলে কোনটা সম্ভব।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে কারাবন্দি রয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকলেও দলটি কিছুতেই হাল ছাড়বে না। এটাই তাদের ফাইনাল খেলা, একেবারে অগ্নিপরীক্ষা। ফলে যেভাবেই হোক শেষ পর্যন্ত এক দফার আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা। কিন্তু বিএনপি কী আদৌ চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছানোর এই আন্দোলনে সফল হতে পারবে? এমন প্রশ্নও রাজনীতির বাজারে চালু রয়েছে। বিএনপি প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে তাকিয়ে আছে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে যে কোনো উপায়ে একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। নির্বাচনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের এ রকম যুদ্ধংদেহী অবস্থান দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য চরম উদ্বেগের, চরম শঙ্কার। তারপরেও ভালো কিছুর জন্য আশাবাদ জারি রাখতে চাই। বলতে চাই, সবকিছু হোক সংঘাতমুক্ত। সবকিছু হোক শান্তিপূর্ণ। সবকিছু হোক দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য।

লেখক : এস আর সেলিম, সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়