জালিয়াতি চক্রেও মূল হোতা আটক
বিদেশ ভ্রমন কর জাল করে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল জালিয়াত চক্র। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল এলাকা থেকে ট্যাক্স জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ল্যাবটপ, প্রিন্টার, জাল ভ্রমনকর রশিদ ও সোনালী ব্যাংকের সীলসহ জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা সাদিপুরগ্রামের মোমিনের ছেলে শামিম চৌধুরী (৩২) আটক করা হয়। এ সময় ভারতগামী ৮জন পাসপোর্ট যাত্রীর কাছ থেকে ৮টি জাল ভ্রমন কর রশিদ জব্দ করা হয়।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, জাল ভ্রমন ট্যাক্স ফাঁকির সাথে আরও ৫/৬ জন জড়িত। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের সিরিয়াল ছাড়া পুলিশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস’র কাজ দ্রুত করে দেওয়ার টোপ দিয়ে ভ্রমন ট্যাক্সের টাকা হাতিয়ে নেয় যাত্রীদের কাছ থেকে। আটক শামীমের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ট্যাক্স জালিয়াতির মামলা রয়েছে। মামলায় সে জামিনে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সূত্র জানা যায়, শামিম দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। সে এর আগে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই ভ্রমন কর ফাঁকির অভিযোগে আটক হয়। আর এই ট্যাক্স ফাঁকির দায়ে কাস্টমসের মামলায় কয়েকজন ব্যক্তি হাজত বাস করে। শামিম ঐ মামলায় জামিন পেয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সামনে ভ্রমন কর ফাঁকির ব্যবসা করলেও কেউ এ গুলো নিয়ে মাথা ব্যাথা করে না। সে সকালে যাত্রীদের এসব ট্যাক্স ফাঁকি দিত। কারন ঐ সময় ভারতগামী যাত্রীদের অনেক ভীড় হয় চেকপোষ্ট এলাকায়। ভীড়ের চাপে কর্তৃপক্ষ এসব খেয়াল না করায় সুযেগে সৎ ব্যবহার করে।
বেনাপোল চেকপোষ্ট আন্তর্জাতিক প্যাচেঞ্জার টার্মিনালের পিমা নামে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী সাকিবুন নাহার মিম বলেন, আমি যাত্রীদের ভ্রমণ কর ও পোর্ট কর দুটি দেখার সময় সন্দেহ মনে হয়। এসময় এপিবিএন পুলিশ, আনসার সদস্যদের বিষয়টি অবগত করা হলে তারা যাচাই বাছাইয়ের পর বিষয়টি জাল প্রমানিত হয়। পরে শামিমকে আটক করে পুলিশের সহযোগিতায় তার মেশিনপত্র জব্দ করা হয়। এরপর তাকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ নিয়ে যায়।
বন্দরের যাত্রী টার্মিনালের নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার এর পিসি শামছুর রহমান বলেন, শুনেছি এর আগেও এই শামিম এর নামে ট্যাক্স ফাঁকির মামলা হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, আটক শামিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে সে দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমন কর জালিয়াতি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল বলে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় আরও একটি ট্যাক্স জালিয়াতির মামলা চলমান আছে।
বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে বিদেশ ভ্রমন কর জালিয়াতির একটি শক্তিশালী চক্র সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল। এ ধরনের একটি গোপন সংবাদ পাওয়ার পর দুপুরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্যাক্স জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা শামীমকে হাতে নাতে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় ট্যাক্স জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। আটক শামীমকে মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেনাপোল চেকপোস্টের অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা প্রায় শতাধিক কম্পিউটার দোকান, মোবাইলের দোকান ও ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের এন্টারপ্রাইজের দোকানে এসব জাল ভ্রমন কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরী করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও বরাবরই তারা ছিল নীরব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।