দালাল বেড়ে সাজিদ ও আহসান আহমেদ, সমন্বয়ক মাস্টার সাইফুল
স্বাস্থ্য বিভাগে আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের নামে এতিম, প্রতিবন্ধি ও বেকার যুবকদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগিরা। যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্ত কেশবপুর, অভয়নগর ও চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন মেয়াদে আউট সোসিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহ করার নাম করে কাজল বিশ্বাস ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছেন ৩৩ জন বেকার যুবককে। নিয়োগপত্র পাওয়া যুবকরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেন এবং ওই নিয়োগপত্র ভুয়া বলে জানান।
কেশবপুর উপজেলার কাস্তা গ্রামের ভূক্তভোগী প্রতিবন্ধী গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেছেন, যশোর শহরের প্যারিস রোডের কিতাব ঘরের মালিক আজিজ উল্লার মাধ্যমে কাজল বিশ^াসকে আমি ৩ লাখ, একই গ্রামের আব্দুল্লাহ আল—মামুন ৩ লাখ, রাকিব হাসান ৩ লাখ ও সাতক্ষীরা তালা উপজেলার অভয়তলা গ্রামের আবু নাঈম ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট চারজন ১২ লাখ টাকা দিয়ে কোনো চাকুরী পাইনি। আমাদেরকে অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড এর মালিক কাজল বিশ্বাস যশোরের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরী দেয়ার নামে যে নিয়োগপত্র দিয়েছেন তা ভুয়া বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আমরা অত্যান্ত গরীব মানুষ। চাকুরী পাওয়ার আশায় টাকা ধার নিয়ে, সুদে নিয়ে এবং জমি বন্ধক রেখে দালাল আজিজ উল্লার মাধ্যমে মাথাপিছু ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছি কাজল বিশ^াসকে। যেহেতু আমাদের নিয়োগপত্র ভূয়া, সেহেতু আমরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য যশোর জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রতিবন্ধী গোলাম মোস্তফা আরও জানান, আমি শুনেছি কেশবপুর, অভয়নগর ও চৌগাছা উপজেলার দালাল আফিকুর রহমান, মনিরামপুর উপজেলার দালাল অসিত মন্ডল ও বাঘারপাড়া উপজেলার দালাল শাহিন, যশোর সদর উপজেলার মোবারককাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও দালালদের প্রধান সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকার দালাল বেড়ে সাজিদ এবং যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আহসান আহমেদ অর্থ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজল বিশ্বাসের সাথে পরস্পর যোগসাজসে বাকি ২৯ জন বেকার যুবকের কাছ থেকেও মাথাপিছু ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। বাঘারপাড়া উপজেলার ভুক্তভোগী সাগর জানান, টাকা দিতে না পারায় দালাল শাহিন তার গোয়াল ঘর থেকে গরু ধরে নিয়ে গেছে। আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বহুল বিতর্কিত কাজল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণার মামলা হয়েছে। যশোর শহরের গাড়িখানা রোডের ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত যশোর সদরে এই মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং— পি— ৫০৬১/২৩। মামলার একমাত্র আসামী কাজল বিশ্বাস যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাকোশপোল গ্রামের মৃত সন্তোষ বিশ্বাসের পুত্র।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ জুন ব্যবসায়িক সূত্র ধরে আসামী কাজল বিশ্বাস দুই মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা বলে বাদীর নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা ধার নেয়। যথাসময়ে আসামী কাজল বিশ্বাস বাদীর টাকা পরিশোধ না করে নানা ছলচাতুরী করেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রতিকার পেতে আনোয়ার হোসেন আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
যশোর সদরের দালালদের প্রধান সমন্বয়ক শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, আমি কয়েকজনকে চাকুরী দেয়ার জন্য কাজল বিশ্বাসকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকুরী দিতে না পারায় আমি টাকা ফেরত নিয়ে এসেছি। এখনও ১ লাখ টাকা ফেরত পাবো। এদিকে প্রতারিত যুবকরা টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় এখন পথে পথে ঘুরছেন।
এব্যাপারে কেশবপুর, অভয়নগর ও চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, অর্থ প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক প্রদত্ত নিয়োগপত্র ভুয়া। কারণ এ ধরণের কোনো টেন্ডার বা সার্কুলার এখনও পর্যন্ত হয়নি। এব্যাপারে অভিযুক্ত কাজল বিশ্বাসের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি। ভুক্তভোগিরা এব্যপারে যশোর জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এব্যাপারে যশোর সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান আমার জানামতে, আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের জন্য কেশবপুর, অভয়নগর ও চৌগাছা উপজেলায় এখনও পর্যন্ত কোনো সার্কুলার দেয়া হয়নি। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জনবল সরবরাহের নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে অর্থ বাণিজ্য করে থাকেন তাহলে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।