সমবায়ে গড়ছি দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত শনিবার সারাদেশে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা সমবায় দিবস উদযাপন করতে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নিবন্ধিত সমিতিগুলো থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সমবায় অফিস সূত্রে জানাযায়, কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত সমিতির সংখ্যা ২১৯টি তার মধ্যে কার্যকারি আছে ৬৫টি।
চাঁদা না দিলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল, সরকারি প্রণোদনা ও প্রকল্পের ঋণ বঞ্চিত এবং অডিট আপত্তির হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে সমবায় কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এতে অনেকে সমিতির নিবন্ধন রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছেন। চাঁদা আদায় নিয়ে উপজেলা সমবায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, সমবায় দিবস উপলক্ষে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা। এসব টাকা অফিসে গিয়ে ও আবার কেউ কেউ বিকাশের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন।
অনেক সমবায়ীর ধারণা, সামনে কয়েক কোটি টাকা ঋণ প্রকল্প আসবে। দিবস পালনে চাঁদা না দিলে তারা এসব প্রকল্পের ঋণ থেকে বঞ্চিত হবেন।
একটি সূত্র জানায়, সমবায় অফিসকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সমবায় সমিতি নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করেই ডেইলি কিস্তির রমরমা সুদে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। যার ফলে এই সব সমিতির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননা সমবায় কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সমিতির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করতে পারেনি অধিকাংশ সমিতি। করোনার পর থেকে লোকসান গুনছে এসব সমিতি। তবুও নিবন্ধন রক্ষা ও বার্ষিক অডিটে (হিসাব পরীক্ষা) ঝামেলা এড়াতে কর্মকর্তার দাবিকৃত টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। দিবস পালনে সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্তেও সমিতি থেকে চাঁদা আদায় করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে।
উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলাম নামের এক সিআইজি সভাপতি জানান, তাদের সমিতির অডিট করার জন্য সমবায় কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান তার কছে টাকা দাবি করেছিলেন তাই তিনি আর অডিট করাননি।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে এক সমবায়ী বলেন, আমি গেঞ্জি বানিয়ে দিয়েছি ৩ হাজার টাকার আর নগত দিয়েছি ২হাজার টাকা ।
কামরুজামান রানা নামের এক সমবায়ী জানান, আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চেয়েছিলো সমবায় কর্মকর্তা আসাদ স্যার ও ইমদাত আমি তাদের ২ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন ব্যবসা মোটেও ভালোনা তার পরও তাদের টাকা দিতে হয়েছে।
উপজেলার তত্বিপুর বাজারের এক সমবায়ী জানান, অমার কাছে ৫হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিলো অমি দুই হাজার টাকা দিয়েছি। আপনারা আমাদের নাম প্রকাশ করলে অফিস থেকে ঝামেলা করবে বলেও জানান ওই সমবায়ী।
একাধিক সমবায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের প্রতিবছর সমবায় দিবসে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে অফিস থেকে অনেক ঝামেলা করে। আবার নিবন্ধন বাতিলেরও ভয় দেখান।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সমবায় দিবস উপলক্ষে আমাদের সরকারি বাজেট ২০ হাজার টাকা। সমবায় দিবস করতে গেলে এই টাকাই কিছুই হয়না তাই আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু সার্পোটিং নিয়ে থাকি।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাফর ইকবল জানান, এটা সমবায়ীদের অনুষ্ঠান তারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবেন কিভাবে তারা তাদের অনুষ্ঠানটি করবেন। এখানে সরকারি কর্মকর্তার চাঁদা নেবার কোন সুযোগ নেই। চাঁদা আদায় করা এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।