মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পৌঁছানোর মাধ্যমে কাঙ্খিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে চড়ে ওই অংশের উদ্বোধন করেছিলেন। দ্বিতীয় অংশের উদ্বোধনের পর দেশের প্রথম মেট্রোরেল কার্যত পূর্ণতা পেল।
বাংলাদেশে গণপরিবহনে মেট্রোরেল আধুনিক বাহন। এটিকে মাইলফলক বলা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ মাত্র ৩৮ মিনিটে পার হতে পারবেন যাত্রীরা। রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগণের অভিযোগের শেষ নেই। দুর্ভোগ ঢাকা মহানগরীর মানুষের নিত্যসঙ্গী। আশা করা হচ্ছে, ঢাকা মহানগরীর জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় পুরোদমে চালু হতে আরো কিছু সময় লাগবে।
বর্তমানে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পুরোদমে চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এই ট্রেনে। ইতোমধ্যে বহুল কাঙ্খিত মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ১০০ টাকা।
মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব স্বল্প দূরত্বের জন্য সুবিধাজনক না হলেও বেশি দূরত্বের যাত্রীদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী। ২ কোটির বেশি মানুষের শহর ঢাকা। কিন্তু সেই তুলনায় নাগরিক সুবিধা বিশেষত স্বাচ্ছন্দ্যে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র ভ্রমণের সুবিধা এখনো খুবই সীমিত। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ নেই এই মেগা সিটির নাগরিকদের। নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনা এবং সময় বাঁচাতে সরকার রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোরেলের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়। তিনটি ধাপে এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রথম ধাপের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এ অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে এ অংশের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনই হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা। এর ফলে সড়কপথে যানবাহন চলাচল কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সময় সাশ্রয়ের (টাইম কস্ট) কারণে দৈনিক প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং গাড়ির অপারেশন খরচ বাবদ আরও ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে; যা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। যানজটের কারণে শ্রমঘণ্টা ও উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। যানজটের কারণে দেশের প্রধান প্রধান শহরে নগরায়ণের অনেক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
মেট্রোরেল রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আনবে আমূল পরিবর্তন। মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।