যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমির প্রধান শিক্ষক জহুরুল পারভেজের স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপানা, সরকারি রেকর্ডিও যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে পাঁকা দোকান ও ঘর নির্মাণের এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। রবিবার প্রতিষ্ঠানের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক রফিকুল ইসলাম রাজিব, জাহিদ হাসান, আবু সালাম আসাদ, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, বশির আহমেদ, শামসুর রহমান ও নাজমুল হাসান ফারুক।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা জানান, রুপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমির পুরাতন মূল গেট বন্ধ করায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক এই গেট বন্ধ করে সেখানে দোকানঘর বরাদ্দ দেয়ার পায়তারা করছে। কিন্তু
প্রধান শিক্ষক বলছেন, কোন বরাদ্দ বা ভাড়া দেওয়া হয়নি, সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
যশোর সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একামেডি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পুরাতম মূল গেট বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রধান ফটক বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক জহুরুল পারভেজ সেখানে একটি দোকান ঘর তৈরি করে ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে- যা মোটেও শুভকর নয়। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলেমিশে প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোন অবস্থায় কুষলিত হতে দেবো না।
সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমীর নাম সম্বলিত গেটটি ইটের দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে বালি ভরাট করে পাশের দোকানের সাথে মিল রেখে একটি দোকানঘর তৈরি করা হয়েছে। রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জহুরুল পারভেজ পূর্বে এক ব্যক্তির নিকট থেকে টাকা নিয়েছিলেন স্কুলের চাকরি দেওয়ার কথা বলে। তিনি তাকে সেই চাকরি দিতে না পেরে, ওই ব্যক্তির টাকাকে জামানত হিসেবে নিয়ে স্কুলের পুরাতন মূল গেটটি বন্ধ করে একটি দোকান ঘর তৈরি করে ওই ব্যক্তিকে ভাড়া দেয়ার চক্রান্ত করছে।
এদিকে, এই পুরাতন গেট বাদে প্রতিষ্ঠানের আরো দুইটা গেট রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি সংলগ্ন স্কুলের জমির সীমানা দিয়ে একটি গেট আর অন্য একটি গেট আছে যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন। এই গেটটিও হাইওয়ে সংলগ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র স্থানীয় মহসীন আলী (৮০) জানান, আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র। এই প্রতিষ্ঠান আমার- এই গেট এখানে রাখতে হবে। গেটটি উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আমাদের চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলেছেন এই পুরাতন মুল গেট রাখতে হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাদের কথা শোনেননি। আমার দাবি স্থানীয়দের দাবি- এই গেট বন্ধ করা যাবে না। এই গেট বন্ধ করে কোন দোকান বরাদ্দ দিতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ডা. ইব্রাহিম বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি এই গেট বন্ধ করে এখানে একটি দোকান হচ্ছে। আমি চাই না এখানে কোন দোকান হোক।
তিনি আরো জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশের অন্য দুইটা গেট আছে। একটি মহাসড়ক সংলগ্ন অপরটি রেলওয়ের পাশ দিয়ে অবস্থিত। এর মধ্যে মহাসড়ক সংলগ্ন গেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অপরটি রেলওয়ের পাশ দিয়ে অবস্থিত হওয়ায় অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। তাই আমরা স্থানীয় চাই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই গেটটি উন্মুক্ত রাখা হোক।
এদিকে পুরাতন গেট নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ করেন, জিরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরজাহান। তিনি বলেন, আমি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্রী। পুরাতন এই মুল গেট দিয়েই আমি এই প্রতিষ্ঠানের যাওয়া আসা করেছি। এই গেট প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। এই গেট বন্ধ করা যাবে না।
রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমীর প্রাক্তন ছাত্র স্থানীয় আব্দুল আলিম (৪০), গৌতম কুমার বসু (৪৫), গোলাম রসুল মোড়ল (৫৫), আব্দুর রহিম বিশ্বাস (৬৫) সহ স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ একই। তাদের কথা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সাথে জড়িত এই গেট বন্ধ করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিএম জহুরুল পারভেজ জানান, আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ ম্যানেজিং কমিটি সিন্ধান্ত নিয়েই এই পুরাতন গেটটি বন্ধ করেছি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রবেশের আরো দুইটা গেট আছে। একটি প্রতিষ্ঠান একাধিক গেট থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। এইজন্য এই গেটটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
গেট বন্ধ করে দোকানঘর নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, এখানে দোকান ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। মূলত এই গেটটি হয়ে গেছে স্থানীয়দের মূলমূত্র ত্যাগের স্থান। এই জন্যই এই গেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি প্রতিষ্ঠান কমিটির মনে হয় এই গেটটি খোলার প্রয়োজন সিন্ধান্ত নিবো।
স্কুলের বর্তমান অভিভাবক সদস্য ছাত্রছাত্রী রূপদিয়ার সুধীজন মহল সামাজিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের দাবি স্কুলের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠাকালীন মূল গেটটি পুনঃনির্মাণ পূর্বক আধুনিকভাবে তৈরি করে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের রাস্তা করতে কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।