দূর্ঘটনার ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল
দ্রুত, স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরামদায়ক ভ্রমনের বাহন মোটরসাইকেল এখন গ্রাম্য সড়ক সহ আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়ক গুলোর গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
মোটরসাইকেলের ভুল ব্যবহার এখন সমাজের জন্য তথা জানমালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূর্ঘটনা। সড়কে যত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা ঘটছে তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগেরই বেশি চালকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। মোটরসাইকেল চালানোর কোন বৈধতা না থাকলেও পারিবারিক ভাবেই তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের হাতে।
রূপান্তর প্রতিদিনের বিশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, “গ্রাম্য সড়ক, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের ওপর অধিকাংশ বাইক আরোহীর বয়স ১৮ বছরের নিচে, ৩-৪ জন একই বাইকে, লুকিং গ্লাস থাকেনা, হেলমেট পরিধানে অনাগ্রহী, স্কুল ড্রেসেই বাইক রেসিং, স্কুল ছুটির সময় বাইক গুলো বেশি বেপরোয়া, ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা নেই বললেই চলে, মডিফাই করা সাইলেন্সার ব্যবহারে জনমনে বিভান্তি ও অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি, বাস ট্রাকের উচ্চ শব্দ দূষণকারী হর্ণ মোটরসাইকেলে ব্যবহার করে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন নিহত এবং ৯৭৮ জন আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে এই মাসে ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত, ১১৪ জন আহত হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮৩ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ মাসে ১৭৯ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, এপ্রিল মাসে ১৯১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে (শুধুমাত্র ঈদের আগে ও পরের ১৪ দিনে ১২৭ টি দূর্ঘটনায় ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে), মে মাসে ১৫৬ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, জুন মাসে ২০৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, জুলাই মাসে ১৮৮ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আগস্ট মাসে ১৪২ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে ১৬৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি।
এ বিষয়ে যশোরের ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল বলেন, “উঠতি বয়সি ছেলেদের বাইক চালানো দেখলে আমাদের এখন রাস্তায় বের হতেই ভয় লাগে। কখন না গায়ের উপর তুলে দেয়।”
ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুরের বাসিন্দা হাসান রেজা (৪০) বলেন, কলেজ শুরু আর শেষ হওয়ার সময় যেভাবে এদিকে বাইক চালায় মনে হয় উড়ে যাচ্ছে। তাতে আমরা আতঙ্গকিত হয়ে যায়। কারোর মাথায় হেলমেট থাকেনা। এক বাইকে ৩/৪ জন উঠে।”
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি আই) এর এক কর্মকর্তা জানান, গত অক্টোবরে প্রায় এক হাজার মামলা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে অপ্রপ্ত বয়স্কের সংখ্যা শতাধিক। আর এই অপ্রপ্ত বয়স্ক মোটরসাইকেল চালকের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সচেতন করার জন্য এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে জীবনমুখি প্রচারণা চালাতে হবে। একইসাথে গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।