যশোরের চৌগাছায় এক কলেজ (মুসলিম) শিক্ষার্থী (১৭) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের স্বীকার হওয়ার পর ওই শিক্ষার্থীকে ব্যাপক মারপিট করে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এক ধর্ষক সুশান্ত দাসকে (১৯) গ্রেপ্তারের পর ঝিনাইদহের মহেশপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে চৌগাছা থানা পুলিশ। ধর্ষণে ব্যবহৃত আলামতও (কনডম ও ধর্ষিতার রক্ত) জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে চৌগাছার পারশবর্তী মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের মহেশখালী গ্রামে কাটগড়া বাওড়ের পাশে এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
দুপুর দুইটার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন ও পরিবার উদ্ধার করে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে নেন। সেখানে ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারায় চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় বিকাল চারটার দিকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেফার্ড করা হয়।
ধর্ষিতা মহেশপুরের কাটগড়া ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী এবং গ্রেপ্তার ধর্ষক সুশান্ত একই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ধর্ষিতা চৌগাছার সুখপুকুরিয়া ইউপির একটি গ্রামের বাসিন্দা এবং ধর্ষক সুশান্ত দাস একই গ্রামের সুখদেব দাসের ছেলে। সুখদেব দাস সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশের চাকরি করেন।
চৌগাছা হাসপাতালে মেয়েটিকে নিয়ে আসার পর মেয়েটির জ্ঞান ফেরে। এসময় সে ব্যাপক ছটফট করছিলো। পরে তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার লুৎফুন্নেছা লতা একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন নার্স ও মেয়েটির চাচিকে সাথে রেখে পরীক্ষা করেন। সেখানে মেয়েটি তাকে চারজন মিলে ধর্ষণ করেছে বলে চিকিৎসকদের জানায়।
এবিষয়ে চিকিৎসক লুৎফুন্নেছা লতা জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হলে যতটুকু ক্ষত হয় সে ধরনের ক্ষতচিহ্ন তারা পাননি, তবে ক্ষত আছে। ডাক্তার লতা বলেন, মেয়েটিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেফার্ড করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে কিনা সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে। তবে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, মেয়েটি খুবই ট্রমা আক্রান্ত থাকায় এবং ছটফট করতে থাকায় নিশ্চিতভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে কিনা বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান এমনকি পরীক্ষা করতে গেলে তাকেও মেয়েটির কয়েকটি লাথি খেতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আল ইমরান বলেন, মেয়েটির কাছে শুনতে চাইলে সে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে বলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছে। তবে সে চিৎকার ও ছটফট করা ছাড়া চিকিৎসকদের কোন কথারই উত্তর দেয়নি। সে খুবই ট্রমা আক্রান্ত ছিলো।
এদিকে ধর্ষণের পর ওই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় কিছু যুবক ব্যাপক মারপিট করে। মারপিটে সে মারাত্মক আহত হয় এবং ভয় পেয়ে যায়। হাসপাতালে পরীক্ষার সাথে জড়িত একাধিক সহকারী জানিয়েছে মেয়েটির বুকে, তলপেটেসহ বিভিন্ন জায়গায় দুর্বৃত্তরা লাথি, কিল- ঘুসি মেরে আহত করেছে।
হাসপাতালে উপস্থিত থাকা চৌগাছা থানার ওসি তদন্ত জেল্লাল হোসেন মেয়েটিকে শারীরিকভাবে আহত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, মেয়েটির হাতে, গায়ের বিভিন্ন জায়গায় ফোলা জখম করা হয়েছে।
সুখপুকুরিয়া ইউপির পুড়াপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। উদ্ধার করার সময় মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তিনি বলেন স্থানীয় কিছু যুবক মেয়েটি এবং সুশান্তকে আটক করে রেখেছিল। ওই এলাকাটা আমাদের সীমানার মধ্যে নয়। তবুও আমাদের ইউনিয়নের ছেলে মেয়ে হওয়ায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করি।
চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল পাশর্^বর্তী মহেশপুর থানার অধীনে হওয়ায় ধর্ষক সুশান্ত দাসকে গ্রেপ্তার করে মহেশপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন এ ঘটনায় মহেশপুর থানা পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।