দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশে নির্মিত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের সাফল্যে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি সোনালি পালক। এই টানেল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে এ টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টানেলটি নির্মাণ করছে।
দুটি টিউবের চার লেনের সড়কের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে পাঁচ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়। এ টানেল চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে পর্যটননগরী কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে আসবে। এতে যাত্রা সময়ও এক ঘণ্টার মতো কমবে। চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ করবে প্রকল্পটি। চট্টগ্রামের নতুন শহর গড়ে উঠবে নদীর অপর প্রান্তেও। এর ফলে নগরীর অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক আকার হবে দ্বিগুণ। প্রথম বছরে এ টানেল দিয়ে ১৭ হাজারের বেশি গাড়ি পারাপার হবে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
একই সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মিরসরাই ইকোনমিক জোনের যোগাযোগ স্থাপনে সেতুবন্ধন হবে চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের সঙ্গে সম্মিলন ঘটিয়েছে টানেল। এই টানেল কেন্দ্রকে করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন্ন শ্রেণিপেশার নেতারা বলেছেন, টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার পর্যন্ত শিল্পায়ন ও পর্যটনের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে শিগগির একটি ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। এই টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। সহজ শর্তে শিল্প প্লটসমূহকে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে দ্রুত বরাদ্দ প্রদান করে নিশ্চিত করতে হবে সব অবকাঠামোগত সুবিধা। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য বেসরকারি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ দক্ষিণ প্রান্তে শিল্পায়ন হলে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল আরো বাড়বে।
এছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বে-টার্মিনাল প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়ক, কুমিল্লা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম প্রকল্পসহ এ অঞ্চলে যেসব মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক ১০টি মেগা প্রকল্পের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।