৫ দিন বন্ধের পর আজ চালু হচ্ছে বেনাপোল বন্দর

আগের সংবাদ

মুসলিমদের জন্য আল-আকসা নিষিদ্ধ করে দিল ইসরায়েল

পরের সংবাদ

এমন মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে?

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৩ , ১২:৫৪ অপরাহ্ণ আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২৩ , ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

রেলের গাফিলতির কারণে গত সোমবার ভৈরব স্টেশনের আউটারে যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেসে উল্টো ইঞ্জিনের পণ্যবাহী ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন মানুষ। দুর্ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। প্রাণহানি বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। আগে লাইনচ্যুত হয়ে বা অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে প্রায়ই দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। এজন্য রেলওয়ের চালক ও কর্মীদের অবহেলা, ভুল সিগন্যাল বা সিগন্যাল অমান্য করা এবং নানা অনিয়মকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভৈরবের ঘটনায় রেল সূত্র বলছে, ৩০২৮ নম্বরের ইঞ্জিনে পণ্যবাহী ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালক। রেলের ইঞ্জিন সামনে পেছনে দুই দিকে চলতে পারে। উল্টো করে লাগানোর কারণে ইঞ্জিনের পেছন দিক ছিল ট্রেনের সামনে আর চালকের বসার স্থান (ক্যাব) ছিল পণ্যবাহী কনটেইনারের কাছাকাছি। অর্থাৎ চালক সামনে থাকার পরিবর্তে বগির কাছাকাছি বসে ট্রেন চালাচ্ছিলেন। একাধিক চালক বলছেন, এতে ‘লং হুড’ সমস্যা তৈরি হয়। অর্থাৎ ইঞ্জিনের লম্বা বডি সিগন্যাল এবং চালকের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ফলে চালককে সিগন্যাল দেখতে হয় দূর থেকে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবহেলার দায়ভার কে নেবে, এতগুলো মানুষের প্রাণহানির দায় কে নেবে? এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও এর সুপারিশগুলো কমই আমলে নেয়া হয়। রেলযাত্রাকে প্রকৃতই নিরাপদ করতে চাইলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রেল দুর্ঘটনার আরেকটি ভয়াবহ কারণ হচ্ছে, অরক্ষিত রেলক্রসিং। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত। এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। রেলওয়ের উন্নয়নে গত এক যুগে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা রোধে বড় অঙ্কের অর্থের কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। এর ফলে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া লোকদের দ্বারাই বছরের পর বছর চলছে ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণ। দেশে রেলপথে রেলক্রসিং স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার দায় আইনত কোন কর্তৃপক্ষের? বর্তমান বাস্তবতায় তাদের ভূমিকা কী। রেল সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়নে বহু প্রকল্প গ্রহণের কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু রেলের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা রেলক্রসিং সুরক্ষিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন? আর অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা এগুলো স্থাপিত হয়। কিন্তু এগুলোতে অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ হয়ে তো থাকতে পারে না। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথাও শোনা যায়। রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বলতে চাই, রেলওয়েতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে, রেললাইনগুলোর সংস্কার করে এবং নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করা হোক।

আইর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়