শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়নে চামড়া সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশব্যাপী শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
রবিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীতে বাংলাদেশে চামড়া খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: পয়েন্টস টু পন্ডার শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি একথা বলেন।
একইসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে এই খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী এবং মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুল ইসলাম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান।
চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় খাত। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের পরই এ খাতের অবদান ছিল সর্বোচ্চ। চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের অপরিসীম সম্ভাবনা অনুধাবন করে সরকার এটিকে একটি অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এখানে উল্লেখ্য স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প সরকার হতে নগদ ভর্তুকি সুবিধা পেয়ে আসছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর এ ধরনের সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
এমতাবস্থায়, স্থানীয় চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং উত্তরণ পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য দেশের চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পকে প্রয়োজনীয়রূপে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কি ধরনের নীতি পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন তা পর্যালোচনার লক্ষ্যে উক্ত কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান তাঁর বক্তৃতায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিপদ্ধতি প্রণয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী তাঁর বক্তৃতায় চামড়া শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্য সহজীকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুল ইসলাম তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও চামড়াজাত শিল্পের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে উভয় খাতই লাভবান হতে পারে।
কর্মশালার বিষয়বস্তুর উপর মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের অন্যতম বিশেষজ্ঞ রবিউল ইসলাম রবি।
কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ শামিমুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি- এর পরিচালক ডঃ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদিন এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।
প্যানেলিস্ট ও আলোচকগণ ট্যানারি এস্টেটের সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি-টি সঠিকভাবে কার্যকর করা, তৃণমূল পর্যায় থেকে কাঁচা চামড়া উপযুক্ত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা এবং চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প শক্তিশালীকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
রবিউল ইসলাম তাঁর উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন হতে পারে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
তিনি আরো অভিমত ব্যক্ত করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি চামড়া বা চামড়াজাত কারখানাকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এল ডাব্লিউজি)-এর সনদপ্রাপ্তির জন্য প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, যে ট্যানারি এস্টেটের সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি-টি সঠিকভাবে কার্যকর করা এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ প্রাপ্তি এখন সময়ের দাবি।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাত ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।