নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায়ও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদলত। উচ্চ আদালতের এমন পর্যক্ষেণের ফলে নতুন করে চাপে পড়েছে বিএনপি।
পাঁচ নেতার সাজা স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণই এসেছে উচ্চ আদালত থেকে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন।
ওই পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের দেওয়া ৪৪ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি রবিবার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সাজাপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আব্দুল ওহাব ও মশিউর রহমান।
পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে করা আবেদন ২০১৮ সালে ২৭ নভেম্বর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও জামিন হলেই কেবল অংশ নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আপিলকারীদের সাজা স্থগিত করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল বিভাগে তা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।’
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জনের দায়ে ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। ওয়াদুদ ভুঁইয়া এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল জামিন লাভ করেন।
অপরদিকে যশোরের স্পেশাল জজ গত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মো. আবদুল ওহাবকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকার জরিমানা দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর জামিন লাভ করেন।
এছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু) আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পৃথক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।
ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেনকে ২০০৮ সালের ২৫ মে দুর্নীতির মামলায় মোট ১৩ বছরের দণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন তিনি। আর বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে দুর্নীতির মামলায় ২০০৭ সালের ২১ জুন বিচারিক আদালত ১৩ বছরের সাজ দেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।