২৮ অক্টোবর মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

আগের সংবাদ

পূজার লম্বা ছুটিতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত ভ্রমণে দ্বিগুণ চাপ

পরের সংবাদ

মন্ডপে অধিষ্ঠিত হবেন দুর্গা, ষষ্ঠীতে আজ দেবীর বোধন

রূপান্তর প্রতিদিন

রূপান্তর প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৩ , ৮:২৮ অপরাহ্ণ আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২৩ , ৮:৫৫ অপরাহ্ণ

অপেক্ষার প্রহর ফুরালো। বছর শেষে অভয়বার্তা নিয়ে স্বপরিবারে দেবী দুর্গা আবার এলেন মর্তে। মন্ডপে আজ শুক্রবার উঠবে দেবীর প্রতিমা। সপরিবারে পাঁচ দিন থাকবেন তিনি। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে দেবেন আর্শীবাদ। প্রতিমা শিল্পীদের কাজ প্রায় শেষ। টুকটাক যেটুকু কাজ বাকি তা আজ দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের মতো স্থায়ী মন্ডপগুলতে প্রতিমা স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। আর পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, তাঁতী বাজার ও সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন অস্থায়ী মন্ডপে তৈরির কাজে নিয়োজিত ডেকোরেটরকর্মীদেরও আজ বিকালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এখন তাই উৎসবের আমেজ চারদিকে।

শাঁখারী বাজারের প্রবেশ মুখে, রমনা কালীমন্দির, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমন্দিরসহ বিভিন্ন মন্ডপ ও মন্দিরের সামনে তোড়ন নির্মাণের কাজ শেষ। আলোক সজ্জ্বার কাজ এখনো কিছুটা বাকি। তবে আজ বিকালের মধ্যেই সব আয়োজন শেষ হবে।

বোধনের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী আজ সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হবে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মন্ডপে স্থাপন করা হবে বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মন্ডপে। ভক্তের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ।

পুরান মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবনের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দু মতে অকাল বোধনও বলা হয়। বাঙালির হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে।

ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই উৎসবের মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী সপরিবারে পিতৃগৃহে আগমন করেন। দেবীর দশ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে। যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে উপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষè বাণ ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্ঠের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ দশটি অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং আতসী ফুলেরমতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদেরমতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না। মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক।

দেবী দুর্গার বাহন সিংহ হলেও, মর্তে দেবীর আগমন বা গমনে থাকে অন্য বাহন। যার সঙ্গে জড়িত থাকে সেই বাহনে আগমনের বা গমনের সম্ভাব্য ফলাফল। দেবীর আগমন ও গমন হয় মূলত গজ অর্থাৎ হাতি, ঘোড়া অর্থাৎ ঘোটক, দোলা অর্থাৎ পালকি আর নৌকায় চড়ে। কোন বাহনে দেবীর আগমন হবে বা গমন হবে, তা নির্ধারণ করা হয় সপ্তমী এবং দশমী তিথির ভিত্তিতে। সপ্তমী এবং দশমী কোন বারে পড়েছে সেই বিষয়টি দেখে নির্ধারণ করা হয় দেবীর আগমন বা গমনের বাহন। এ বার যেহেতু সপ্তমী শনিবার পড়েছে তাই দেবীর আগমন হবে ঘোড়ায় চড়ে। আর যেহেতু দশমিক পড়েছে মঙ্গলবার তাই দেবীর গমনও হবে ঘোড়ায়। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দেবী দুর্গা যদি হাতিতে আসেন তাহলে তা অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। হাতিতে দেবীর আগমনের ফলে এই পৃথিবী শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে এমনটাই বর্ণনা রয়েছে। ঘোড়ায় গমন হলে তা অশুভ ইঙ্গিত দেয়। ঘোড়ায় গমন হলে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইঙ্গিত করে। আর এ বছরের দুর্গাপূজোয় দেবীর গমন হবে ঘোড়ায়। এ বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাছাড়াও

দেবীর আগমন হচ্ছে ঘোড়ায়। তবে এসবই অনুমান ভিত্তিক। দেবী নিজেই প্রকৃতির স্বরূপ। তাই দেবী কীভাবে ধরাধামে আসবেন, বা কীভাবে গমন করবেন, তা শুধু তিনি স্বয়ং জানেন। আসা-যাওয়ার লক্ষণ শুভ না হলেও ভক্তের বিশ্বাস, দেবী মঙ্গলময়ী। তিনি জগতের মঙ্গলই করবেন। সন্তানদের আশীষ দেবেন দু’হাত ভরে।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪০৭টি। রাজধানীতে ২৪৪টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়